পর্ব-১ : রাজশাহী কারা হাসপাতালে বন্দি বাণিজ্যের অভিযোগ

পর্ব-১ : রাজশাহী কারা হাসপাতালে বন্দি বাণিজ্যের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; লিয়াকত হোসেন, রাজশাহী : রাজশাহী কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নানা অনিয়মের পর এবার জেলখানায় থাকা বন্দিদের আরাম-আয়েশে রাখার জন্য বছরে কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। আর অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ এখন গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে। সম্প্রতি এ রকমই ঘুষ বাণিজ্যের গোপন ভিডিও ক্লিপ ও ঘুষ নেওয়া ব্যক্তির সঙ্গে হওয়া একাধিক ফোনে কথা বলার রেকর্ড ঘুরপাক খাচ্ছে ফেসবুকে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নগরীর সিএনবি মোড়ে বন্দির স্বজনের নিকট থেকে ১৪ হাজার টাকা গুনে নিচ্ছে আসাদ নামের এক কারারক্ষী। এর আগে অন্য এক ফোনালাপে কথা হওয়া অডিও ক্লিপটিতে শোনা যাচ্ছে, ২০ হাজার টাকা নিয়ে লক্ষ্মীপুর মোড়ে আসতে বলছেন আরেক বন্দির নারী স্বজনের নিকট। ওই নারী জিজ্ঞাসা করছেন, কতো টাকা আনতে হবে, এরপর তিনি বলছেন, আমি বাসায় একা আছি, আমি একজন ছেলে মানুষকে দিয়ে টাকা পাঠাচ্ছি...। পরে এ রকম আরও কয়েকটি অডিও ক্লিপ পাওয়া যায়, তাতেও টাকা লেনদেনদের বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কারারক্ষী আসাদ অভিযোগ স্বীকার করে বাঙলার কাগজকে বলেন, আমাকে আমার অফিসার টাকা নিতে পাঠায়। আমি শুধু বাহক হিসেবে টাকা এনে দেই। তিনি আরও দাবি করেন, যে সকল বন্দির কথা আপনারা বলছেন, তাঁরা আমাকে টাকা দিয়েছে সত্য, তবে আমি তৎক্ষণাৎ সেই টাকা আমার অফিসার ফার্মাসিস্ট ওমর ফারুক স্যারকে দিয়েছি। তবে এই সকল টাকা আমি নিয়ে একা কাউকে মেডিকেল সুবিধা দিতে পারি কি? এটা তো আপনারা বুঝেন। অফিসারের হুকুমের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নাই। আমাকে অফিসার এখন ভয় দেখাচ্ছে, কেনো আমি তাঁর কথা বলেছি। অফিসাররা সব অস্বীকার করে এখন আমাকে ফাঁসাচ্ছে।

জানতে চাইলে ফার্মাসিস্ট ওমর ফারুক বাঙলার কাগজকে বলেন, আমার কথা কারারক্ষী আসাদ বলতে পারে না। তাঁকে দিয়েই আপনাদের ফোন দেওয়াচ্ছি বলে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার তাঁকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

এ বিষয়ে জেলার নিজাম উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি। 

এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার আব্দুল জলিল বাঙলার কাগজকে বলেন, এমন কোনও বিষয় আমার জানা নাই। এমন ঘটবারও কথা নয়। এ রকম কোনও ঘটনা সত্যি ঘটে থাকলে, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফার্মাসিস্ট ও মেডিকেল অফিসার জুবায়ের প্রতিটি মেডিকেল বন্দির নিকট থেকেই মোটা অঙ্কের টাকা নেন। মেডিকেলের বন্দি বাণিজ্য বহু পুরনো। এর আগেও এদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিলো। তবে এবার একাধিক কল রেকর্ড ও ভিডিও গণমাধ্যমকর্মীদের নিকট আসে। তাতে বছরে প্রায় কোটি টাকার মেডিকেল বন্দি বাণিজ্যের বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে। এসব টাকার ভাগ যায় জেলার ও সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।