স্মরণ : 'প্রথা ভাঙা প্রতিবেদক', ২৯ বছরে ‘বিচিন্তা’ সম্পাদক

স্মরণ : 'প্রথা ভাঙা প্রতিবেদক', ২৯ বছরে ‘বিচিন্তা’ সম্পাদক

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : সাপ্তাহিক বিচিন্তার সম্পাদক, লেখক ও সাংবাদিক মিনার মাহমুদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার (২৯ মার্চ)। ২০১২ সালের এইদিনে তিনি মারা যান। বাংলাদেশে সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রতিবেদন বিভাগে আধুনিকতার প্রবর্তক ছিলেন মিনার মাহমুদ। তিনি ১৯৫৯ সালের ১০ মার্চ ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৮৩ সালে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছাত্রজীবন থেকে লেখালেখি শুরু করেন মিনার মাহমুদ। ফরিদপুরে থাকাকালীন এক সময়ের আলোড়ন তোলা লেখক সংগঠন করতেন মিনার মাহমুদ। সাপ্তাহিক বিচিন্তায় ঝড়তোলা সব প্রতিবেদন করে রিপোর্টিংয়ের সনাতনী প্রথা ভেঙে দিয়েছিলেন তিনি। 

১৯৮৭ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই সম্পাদক হিসেবে মিনার মাহমুদের আবির্ভাব ঘটে। ৩২ পৃষ্ঠার নিউজপ্রিন্ট ‘বিচিন্তা’ তাঁকে কিংবদন্তীতুল্য সাফল্য এনে দেয়। ‘বিচিন্তা’ ছিলো তারুণ্যের সম্মিলন। পত্রিকাটিতে যাঁরা কাজ করতেন, তাঁদের গড় বয়স ছিলো ২৪।

এ সময় অকপটে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রকাশের জন্য তিনি ১৯৮৮ সালে গ্রেপ্তার হন। সামরিক শাসক পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। ১৯৯০ সালে সামরিক শাসন হটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হয় দেশে। ১৯৯১ সালে মিনার মাহমুদ দ্বিতীয় দফায় বিচিন্তা প্রকাশ করেন। এবারের যাত্রাও মসৃণ হয় নি। নানা মহলের মামলা, হয়রানির কারণে কিছুদিন পর পত্রিকাটি বন্ধ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে বাধ্য হন।

এরপর দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন ১৯৮০-এর দশকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই সাংবাদিক। ২০০৯ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি আবারও শুরু করতে চান সাংবাদিকতা। পুনরায় প্রকাশ করেন বিচিন্তা। তবে ‘কর্পোরেট সংস্কৃতি’র দাপট সামাল দিতে না পেরে এ দফায় হাল ছাড়লেন মিনার মাহমুদ। ২০১২ সালের ২৯ মার্চ তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন। ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের সপ্তমতলার একটি কক্ষ থেকে সন্ধ্যায় তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই কক্ষে প্রায় একশটি ঘুমের বড়ির খোসা পেয়েছিলো পুলিশ।

সাংবাদিক মিনার মাহমুদ লেখক হিসেবেও ছিলেন সফল। তাঁর গল্পের বই ‘মনে পড়ে রুবী রায়’, উপন্যাস ‘আমার দেবী ফুলন’, জার্নাল ‘পিছনে ফেলে আসি’, ‘নির্ঘুম স্বপ্নের দেশে’ এখনো ঘুরছে পাঠকের হাতে হাতে।