আমাদের ছায়াপথের কৃষ্ণগহ্বরের প্রথম ছবি প্রকাশ।

আমাদের ছায়াপথের কৃষ্ণগহ্বরের প্রথম ছবি প্রকাশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : আমাদের এই মিল্কিওয়ে ছায়াপথেও রয়েছে বিশাল কৃষ্ণগহ্বর। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সেই ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের প্রথম ছবি প্রকাশ করলেন জ্যোর্তিবিদেরা। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১২ মে) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে করে তাঁরা জানালেন, আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে দৈত্যাকার এক কৃষ্ণগহ্বরে প্রথম সরাসরি চিত্র পেয়েছেন তাঁরা। ডোনাটের মতো দেখতে এই কৃষ্ণগহ্বরে ছবি তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষভাবে নির্মিত ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি)। ব্ল্যাকহোল হলো এমন একটি জায়গা, যেখানে কোনও কিছু প্রবেশ করলে আর ফিরে আসে না। এমনকি আলোও এই গহ্বরকে অতিক্রম করতে পারে না। গর্ত বলে পরিচিত হলেও ব্ল্যাকহোলের মধ্যে কিন্তু পুরোটা ফাঁকা জায়গা নয়। বরং এর মধ্যে খুব অল্প জায়গায় এত ভারী সব বস্তু আছে যে এসবের কারণে তীব্র মহাকর্ষীয় শক্তি উৎপন্ন হয়। ব্ল্যাকহোলের পেছনে ‘ইভেন্ট হরাইজন’ নামের একটি স্থান আছে, যাকে বলা হয় ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’। এই জায়গায় মহাকর্ষীয় শক্তি এতটাই তীব্র যে, এখান থেকে কোনও কিছুই আর ফিরে আসতে পারে না। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যে কৃষ্ণগহ্বরটির ছবি তোলা হয়েছে, সেটির নাম স্যাগিটারিয়াস এ*। এর মহাকর্ষীয় কবল থেকে আলো বা কোনও বস্তুই বের হতে পারে না। তাই এটি দেখা যায় না। কিন্তু এর ছায়া একটি উজ্জ্বল ও অস্পষ্ট আলোর বলয় এবং বস্তুর দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। এই আলো কৃষ্ণগহ্বরে নিমজ্জিত হওয়ার আগে বিশেষ বলয় তৈরি করে। ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি) মূলত আটটি রেডিও টেলিস্কোপের একটি নেটওয়ার্ক। এর আগে ২০১৯ সালে মেসিয়ার ৮৭ নামের একটি ছায়াপথে থাকা একটি কৃষ্ণগহ্বরের প্রথম ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছিলো এটি। আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিদ এবং ইএইচটি বিজ্ঞান কাউন্সিলের সহসভাপতি সেরা মার্কফ বলেন, মিল্কিওয়ের কৃষগহ্বর আমাদের মূল লক্ষ্য ছিলো। এটাই আমাদের কাছাকাছি থাকা বিশাল কৃষ্ণগহ্বর। এ কারণেই একে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়। প্রায় শতবর্ষ ধরেই এর অনুসন্ধান চলেছে। তাই বৈজ্ঞানিকভাবে দেখলে এর খোঁজ পাওয়া বিশাল ব্যাপার। আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে যে বিশাল কৃষ্ণগহ্বর আছে, তা নিয়ে জ্যোতির্বিদদের এতো দিনের ধারণা এই ছবির মধ্য দিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো কিছু গবেষক বোসন নক্ষত্র বা অন্য গুপ্ত বস্তুর সম্ভাবনা নিয়ে তাঁদের সন্দেহের কথা বলছেন। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষক ও ইএচটির সদস্য জিরি ইউনসি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি বিষয়টি জেনে আনন্দিত যে, আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে নিশ্চিত একটি কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে। এটি একটি অশান্ত, বিশৃঙ্খল এবং বিক্ষিপ্ত পরিবেশ। এটি আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে যে, ছায়াপথের প্রান্তে বসবাস করার জন্য আমরা বেশ ভাগ্যবান।’ ইউনসি বলেন, ‘এটা অনেকটা মেসিয়ার ৮৭* নামের একটি ছায়াপথের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু সেটি সাড়ে পাঁচ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। কিন্তু নতুন পর্যবেক্ষণ আমাদের নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্য দিচ্ছে। এটা আমাদের ছায়াপথে থাকা কৃষ্ণগহ্বর।’ একে ডোনাটের সঙ্গে তুলনা করে ইউনসি বলেন, ‘এটা আরেকটি ডোনাট। তবে সেটি আমাদের ডোনাট।’ গবেষকেরা বলছেন, আমাদের ছায়াপথে থাকা স্যাগিটারিয়াস এ* নামের কৃষ্ণগহ্বরটি ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। জ্যোতির্বিদ্যার হিসাবে এটি স্থানীয় হলেও একে শনাক্ত করা সহজ ছিলো না। ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন মহাদেশ থেকে পরিষ্কার আকাশে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে তবেই একে শনাক্ত করা গেছে। তবে মেসিয়ার ৮৭* এর তুলনায় এটি অনেক ছোট। এর চারপাশে থাকা গ্যাস ও ধুলা একে আবর্তন করছে। ফলে এর ছবি ক্রমাগত পরবির্তন হতে থাকে বলে একে শনাক্ত করা কঠিন ছিলো। গবেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে আমাদের নিজস্ব ব্ল্যাকহোলের প্রকৃতি সম্পর্কে আকর্ষণীয় ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি এখনো সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। যদি এতে কোনও বড় নক্ষত্র পড়ে যায়, তবে তা কিছু সময়ের জন্য আবার জেগে উঠতে পারে। বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্যারল মান্ডেল বলেন, ‘মহাবিশ্বের গঠন ও বিবর্তন ঘিরে এটি উন্মুক্ত প্রশ্ন। ছায়াপথ নাকি কৃষ্ণগহ্বর কোনটি আগে এসেছে, তা আমরা জানি না। এ ধরনের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সহজ হবে।’