আসছে নীল কার্ড
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : একদিন আগে মেয়েদের সাফে টাইব্রেকার ঘিরে ঘটলো বিরাট এক কাণ্ড। ম্যাচ কমিশনারের ভুলের মাসুল গুনল দু’দলই। অথচ যে টস দিয়ে টাইব্রেকার শুরু হয়, সেই টসই পাল্টে দিলো শিরোপার পথ। ভুগল স্বাগতিকরা, মন খারাপ করল অতিথিরাও। কিন্তু এই টাইব্রেকারের পদ্ধতি চালু হয় বহুকাল আগে। যখন এমন কোনও নিয়ম ছিলো না, তখন কালেভদ্রে এই টস প্রথা চলতো; তাও বেশিরভাগ সময় ম্যাচ পুনরায় হতো। সেই মান্ধাতার আমলের প্রথাটা পুনরায় এনে কী একটা হট্টগোল পাকালেন লঙ্কান ম্যাচ কমিশনার জয়সুরিয়া। কিন্তু মাঠে আসার আগে যদি দুইটা লাইন পড়ে আসতেন তিনি, হয়তো এমন অপ্রত্যাশিত কিছু দেখতে হতো না কাউকে। আইন থাকার পরও আইন না জানলে যা হয়। যাক সেই আলোচনা। এর মধ্যে ফুটবলের আইন তৈরির কারিগর ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি) আগামী মৌসুম থেকে লাল, হলুদ কার্ডের পাশাপাশি নীল কার্ডও চালু করতে চাইছে। ফুটবলবিশ্ব যেনো এ নিয়ে দুই মেরুতে বিভক্ত।
কেউ চাইছে, কেউ আবার বিরোধিতা করছে। মূলত গত মার্চের এজিএমে আলাপ-আলোচনার পরই আইএফএবি এই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। যেমনটা জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আপাতত শীর্ষ পর্যায়ে এই নীল কার্ডের ব্যবহার করা না হলেও ধীরে ধীরে সব ফুটবলে প্রয়োগের চিন্তাও রয়েছে তাদের। নিয়মটা হলো, কোনও খেলোয়াড় যদি এক হলুদ আর এক নীল কার্ড দেখেন, তাহলে তিনি পুরোপুরি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। আর খেলোয়াড়দের আচরণগত সমস্যা, ম্যাচ অফিসিয়ালদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার, সিদ্ধান্ত না মানা– এসব নানা দিক দেখার পর নীল কার্ড দেওয়ার কথা ভাববেন একজন রেফারি।
যদি কোনও খেলোয়াড় নীল কার্ড পান, তাহলে তাঁকে ১০ মিনিটের জন্য মাঠের বাইরে চলে যেতে হবে। সেই সময় শেষ হলে আবার তিনি মাঠে ফিরতে পারবেন। এরই মধ্যে তৃণমূল ফুটবলে এই নীল কার্ডের ব্যবহার সফলভাবে সম্পন্ন করেছে আইএফএবি। ইংল্যান্ড এফএ রাজি থাকলে ‘সিন বিনস’ নামে পরিচিত এই কার্ড সবার আগে এএফ কাপে চালু করতে চায় সংস্থাটি। তবে এ বছরের জুন-জুলাইয়ের ইউরো কিংবা ফুটবলের বড় কোনও আসরে এখনই নীল কার্ড হাতে দেখা যাবে না রেফারিকে। তাই এটা বলাই যায়, নীল রংটা এখনই এমবাপ্পে-হালান্ড কিংবা ভিনিসিয়ুসদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে না।
যেভাবে ফুটবলে কার্ডের যাত্রা: ১৯৬৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টারে আর্জেন্টিনা খেলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। যে ম্যাচে জয় পায় ইংলিশরা। এর পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফলাও করে প্রতিবেদন ছাপানো হয়। মূলত আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় র্যাটিনকে মাঠছাড়া করেন ম্যাচের রেফারি রুডলফ। ম্যাচের পর যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। বিষয়টি ফিফার রেফারি কমিটির কানে যায়। এর পর থেকে মৌখিকভাবে কথা বলে খেলোয়াড়দের মাঠছাড়া করার নিয়ম বাতিলের মুখে পড়ে। আর ১৯৭০-এর দিকে আসে কার্ড দিয়ে শাস্তির বিধান।
যিনি প্রবর্তক : কেন অ্যাস্টন; যাঁকে ফুটবলের কার্ড পদ্ধতির প্রবর্তক বলা হয়। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ড ম্যাচটি ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই বিতর্ক আমলে নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে নতুন পদ্ধতি চালু করেছিলেন এই অ্যাস্টন। মূলত সে সময় ফিফা রেফারি কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। কর্মজীবনের শুরুতে শিক্ষকতা, এর পর সেনাবাহিনীতে থাকা অ্যাস্টন মূলত ট্রাফিক লাইটের সিগন্যাল থেকে ধারণা নিয়েই ফুটবলে কার্ড সিস্টেম চালু করেছিলেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই পদ্ধতির আরও সংযোজন-বিয়োজন করা হয়।
প্রথম ব্যবহার : একটা সময় ছিল, যখন ফুটবলে নিয়ম ছিল হাতেগোনা। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে সেই নিয়ম হয়েছে ডজনখানেক। দিনকে দিন আরও নিয়ম আসছে। আবার পুরোনো কিছু নিয়ম নতুন করে প্রয়োগ হচ্ছে। ফুটবলে এই কার্ড দেখানোর পদ্ধতিটা প্রথম চালু হয়েছিল মেক্সিকোতে ১৯৭০ বিশ্বকাপে। তবে প্রয়োগটা প্রথম করা হয় ১৯৭৪ বিশ্বকাপে। সেবার ওয়েস্ট জার্মানির বিপক্ষে খেলা চিলির খেলোয়াড় কার্লোস প্রথম লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে যান। আর সেই কার্ডটি দেখিয়েছিলেন তুরস্কের রেফারি ডোগান।
কত রঙের কার্ড :
লাল কার্ড : ফুটবল, অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, ব্যান্ডি, ক্রিকেট, ফেন্সিং, ফিল্ড হকি, হ্যান্ডবল, রাগবি, ভলিবল, ওয়াটার পোলো, রেসলিং, টেবিল টেনিস
হলুদ কার্ড : ফুটবল, অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, ব্যান্ডি, ক্যানো পোলো, ফেন্সিং, ফিল্ড হকি, হ্যান্ডবল, রাগবি, টেবিল টেনিস, ভলিবল, ওয়াটার পোলো, রেসলিং
সবুজ কার্ড : ফুটবল (সিরি-এ, বি), অ্যাথলেটিকস, ফিল্ড হকি
সাদা কার্ড : ব্যান্ডি, রাগবি
নীল কার্ড : ব্যান্ডি, হ্যান্ডবল
কালো কার্ড : ব্যাডমিন্টন, ফেন্সিং
৫- এখন পর্যন্ত ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপের ফাইনালে লাল কার্ড দেখেছেন পাঁচ খেলোয়াড়। এরা হলেন আর্জেন্টিনার পেদ্রো, ডেজোট্টি, ফ্রান্সের মার্সেল, জিদান ও নেদারল্যান্ডসের জন অ্যালান।