ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকি আজ

ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকি আজ
বাসস : রক্তাক্ত বিভীষিকাময় একুশে আগস্ট আজ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ দিনটি একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। আজকের দিনটি নারকীয় সন্ত্রাসি হামলার ১৭তম বার্ষিকি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এইদিনে রাজধানির বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে চালানো হয় নজিরবিহিন গ্রেনেড হামলা। গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হিংসার দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। আক্রান্ত হন তৎকালিন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় আয়োজিত সমাবেশে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এসে সন্ত্রাসি হামলার শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মিরা মানববর্ম রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলেও গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মি প্রাণ হারান। পরবর্তি সময়ে গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ে তৎকালিন ক্ষমতাসিন বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রী ও সরকারের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততায় প্রমাণ মিলে ওই সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই হামলাটি পরিচালিত হয়েছিলো। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে ইতিহাসের জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকি পালন করবে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে করোনা সংক্রমণের কারণে কর্মসূচিতে অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। তখন ক্ষমতায় ছিলো বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধিন চারদলীয় জোট সরকার। সেদিন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি বিরোধি’ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিলো তৎকালিন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সন্ত্রাস বিরোধি শান্তি সমাবেশের আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে স্থাপিত অস্থায়ি ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বিভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরিতে। স্পিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর সামনের পিচঢালা পথ। নিহত-আহতদের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভেসে আসে শত শত মানুষের গগন বিদারি আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য। সেদিন রাজধানির প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের তিল ধারণের জায়গা ছিলো না। ভাগ্যগুণে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য শেখ হাসিনা বেঁচে গেছেন দেখে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ১২ রাউন্ড গুলি করা হয়। তবে টার্গেট করা গুলি ভেদ করতে পারে নি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বহনকারি বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাচ। হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালিন বাসভবন ধানমণ্ডির সুধা সদনে। ২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সবমিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। রক্তাক্ত-বিভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স করপোরাল (অবসর) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারি, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারেরসঙ্গে যুদ্ধ করে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরও কয়েকজন পরাজিত হন। হামলায় আওয়ামী লীগের ৪ শতাধিক নেতাকর্মি গুরুতর আহত হয়ে শরিরে স্প্লিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জিবনযাপন করছেন। আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরা। এখনও অনেক নেতাকর্মি সেদিনের সেই গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মিকে তাৎক্ষণিক দেশ-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন নি। এদিকে গ্রেনেড হামলার পর ভয়, শঙ্কা ও ত্রাস গ্রাস করে ফেলে গোটা রাজধানিকে। এই গণহত্যার উত্তেজনা ও শোক আছড়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। হামলার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা নিজে বাঁচতে ও অন্যদের বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ঠিক তখনই পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি-টিয়ার শেল চার্জ করে। একইসঙ্গে নষ্ট করা হয় সেই রোমহর্ষক ঘটনার যাবতীয় আলামত। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রত্যক্ষ মদদে ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। কর্মসূচি : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহিদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় সভাপতিত্ব করবেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গ্রেনেড হামলার দিনটি স্মরণে সিমিত পরিসরে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগি সংগঠনের নেতারা স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে উপস্থিত থাকবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশবাসিকেসঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগি ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মি, সমর্থক, শুভানুধ্যায়িদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।