কাপ্তাইয়ে সীতা মন্দিরে মহাবারুণী স্নান : বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ

কাপ্তাইয়ে সীতা মন্দিরে মহাবারুণী স্নান : বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ ও ডন; এস চাঙমা সত্যজিৎ, খাগড়াছড়ি : মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে প্রাগৈতিহাসিক তীর্থস্থান রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই সীতাঘাটে শ্রী শ্রী মাতা সীতা মন্দিরে মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এক মহাপূণ্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

আজ রোববার (১৯ মার্চ) কাপ্তাইয়ের সীতা মন্দিরে মহাবারুণী স্নানের অনুষ্ঠানে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা হতে আগত সনাতনী সম্প্রদায়ের ভক্তরা ঐতিহাসিক কর্ণফুলি নদীতে স্নান, সীতা মন্দির, শম্ভুনাথ মন্দির, কালি মন্দিরে পূজা দেওয়া এবং মহাপ্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে মা সীতা দেবীর কাছে তাঁদের মনের বাসনা ব্যক্ত করেছেন। এ উপলক্ষে সকাল থেকে অষ্টপ্রহরব্যাপী তারকব্রহ্ম মহানামযজ্ঞ ও সীতা মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে সীতা মন্দির। ঐতিহাসিক এই মন্দিরে বিভিন্ন নিদর্শন ঘুরে ফিরে দেখছেন ভক্তরা। মহাবারুণী স্নানে আসা অনেক ভক্ত জানান, ঐতিহাসিক এই পবিত্র তীর্থ স্থানে আসতে পেরে নিজেদেরকে পূণ্যবান বলে মনে করছেন তাঁরা।

‘আমরা মা সীতা দেবীর বিভিন্ন নিদর্শন ঘুরে দেখছি এবং মহাবারুণী স্নানে স্নাত হয়ে পবিত্র হচ্ছি।’

সীতাঘাট মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রতন দাশ বাঙলার কাগজ ও ডনকে জানান, ঐতিহাসিক এই সীতা মন্দিরে দূর দূরান্ত হতে ভক্তরা আসছেন। সীতা মন্দির, শম্ভুনাথ মন্দির, কালি মন্দিরসহ মা সীতার বিভিন্ন ঐতিহাসিক নির্দশন দেখছেন ভক্তরা। শনিবার থেকে শুরু হয়ে আগামী সোমবার সকাল পর্যন্ত এই উৎসব চলবে।

মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দাশ বাঙলার কাগজ ও ডনকে জানান, এই মন্দিরে মা সীতার অনেক নির্দশন আছে। মা সীতা যে ঘাটে স্নান করেছেন, আজ সে ঘাটে ভক্তরা স্নান করেছেন। এই স্থানের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে আমাদের অনেক প্রতিকূলতা সৃষ্টি হয়। এরপরও এমপি দীপংকর তালুকদার, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সহায়তায় আমরা এই অনুষ্ঠান করতে পারছি।

শ্রী শ্রী মাতা সীতা দেবী মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ জ্যোতির্ময়ানন্দ পুরী মহারাজ বাঙলার কাগজ ও ডনকে জানান, এটি একটি প্রাগৈতিহাসিক তীর্থ স্থান। আমি বিশ্বের সকল ভক্তের কাছে অনুরোধ জানাই, সকলে মিলে এই তীর্থ স্থানকে জাগিয়ে তুলুন। 

এদিকে মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে আজ রোববার বেলা ১২টায় মন্দির প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলার (২৯৯ নম্বর আসনের) সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে বক্তব্য রাখেন। 

এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সনাতন সম্প্রদায়সহ সকল ধর্মের মঠ মন্দিরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু অবৈধ অস্ত্রধারী ও চাঁদাবাজ এই পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে চায় সব সময়। তাই তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে।

সীতা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রতন দাশের সভাপতিত্বে বারণী স্নান অনুষ্ঠানে কাপ্তাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ঝুলন দত্তের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমন দে, রাঙমাটি পার্বত্য জেলা পূজা উদ্‌যাপন সমন্বয়  পরিষদের আহ্বায়ক অমলেন্দু হাওলাদার, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল ওহাব, কাপ্তাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন, চন্দ্রঘোনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম, কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন মিলন, চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী, কাপ্তাই জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি সুবর্ণ ভট্টাচার্য প্রমুখ। 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দাশ এবং সীতা মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ জ্যোতির্ময়ানন্দ পুরী মহারাজ।

সভার পূর্বে প্রধান অতিথি রাঙামাটি জেলা পরিষদের অর্থায়নে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে সীতারঘাট মন্দির কমপ্লেক্স ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। 

এদিকে মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বালন এবং রাত ৮টায় মহানামযজ্ঞের শুভ অধিবাস অনুষ্ঠিত হয়।