সাক্ষাৎকার : উপাচার্যের ব্যর্থতায় ছোট ঘটনা বড় আকার ধারণ করেছে।

সাক্ষাৎকার : উপাচার্যের ব্যর্থতায় ছোট ঘটনা বড় আকার ধারণ করেছে।

ডন প্রতিবেদন : সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের ছাত্রীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রবিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল তিনটার দিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ শটগানের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে। পরে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে রাতে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন। এখন শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। সার্বিক বিষয়ে আমরা কথা বলেছি নাগরিক নেতা ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে। প্রশ্ন : শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা কীভাবে দেখছেন? ফারুক মাহমুদ চৌধুরী : ছাত্রীরা যখনই প্রতিবাদ শুরু করেছেন, তখনই উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এটা সমাধান করতে পারতেন। তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে ঘটনাটা এত দূর গড়াত না। ছাত্রীদের যেসব দাবি, সেটা পূরণ করা খুব কঠিন কিছু ছিল না। মূলত উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতায় ছোট একটা ঘটনা বড় আকার ধারণ করেছে। প্রশ্ন : কেনো এমন ঘটনা ঘটলো? কী মনে হয় আপনার? ফারুক মাহমুদ চৌধুরী : খবর নিয়ে যত দূর জেনেছি, শিক্ষকদের দুটি পক্ষ এখানে সক্রিয় আছে। এখানে একটা নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট আছে। শিক্ষকদের অনৈক্য, সিন্ডিকেট—এসব কারণেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যথাযথভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সামলাতে পারে নি। এটা তাদের অদক্ষতা ও ব্যর্থতাই প্রমাণ করে। তাই উপাচার্য যেমন দায়ী, ঠিক তেমনই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক কর্মকর্তা, শিক্ষকনেতা ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরাও দায় এড়াতে পারবেন না। প্রশ্ন : গতকাল পুলিশের লাঠিপেটায় অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনের নির্দেশে বিনা উসকানিতে পুলিশ তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে... ফারুক মাহমুদ চৌধুরী : শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। উপাচার্যের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। নিশ্চয়ই উপাচার্যের অনুমতি নিয়েই পুলিশ ক্যাম্পাসে গিয়েছে। আর যেভাবে পুলিশ শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে, সেটা কোনো অবস্থাতেই ঠিক হয়নি। যদি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতেন, তাহলে এটা তাঁরা সামলাতে পারতেন। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটত না। এ ছাড়া শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্রীদের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার বিষয়েও আমরা নিন্দা জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের চোখের সামনে এসব ঘটলেও তাঁরা হামলার বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে অস্বীকার করছেন। এতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের মনে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন : এই অবস্থায় করণীয় কী? ফারুক মাহমুদ চৌধুরী : করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দেড় বছর পর সশরীর ক্লাস-পরীক্ষা চালু হয়েছে, এখন আবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বেন। দেখা গেছে, ছাত্রীদের ন্যায্য দাবি সমাধান না করে একটা গোঁজামিল দিয়ে কোনোরকমে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা কোনো অবস্থাতেই ঠিক হয়নি। শিক্ষার্থীরা আমাদেরই সন্তান। এই সন্তানদের নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টা শেষ করা যেত। উপাচার্য জানিয়েছেন, আগের প্রাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন এবং নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রথমেই যখন ছাত্রীরা এ দাবি জানিয়েছিল, তখনই উপাচার্য বের হয়ে এসে বলতে পারতেন, প্রাধ্যক্ষ পরিবর্তন করা হবে। তাহলে এখনকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতো না। কেউ কোনো পদে চিরস্থায়ী থাকবেন—এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। সঙ্গে সঙ্গে প্রাধ্যক্ষ পরিবর্তনের ব্যবস্থা নেওয়া হলে এমন ঘটনা ঘটত না। প্রশ্ন : শিক্ষার্থীরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছেন। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন? ফারুক মাহমুদ চৌধুরী : এটা শিক্ষার্থীরা চাইতেই পারে। কেউ মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী যদি সঠিক নেতৃত্ব দিতে না পারেন, দক্ষতা দেখাতে না পারেন, তাহলে তাঁর পদত্যাগ চাইতেই পারেন। এটা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি।