জুনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি শুরু।

জুনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি শুরু।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুরু হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম। জুন মাসে বদলি শুরু হবে একই উপজেলা বা থানা পর্যায়ে। এরপর পর্যায়ক্রমে বদলির দ্বার খুলবে আন্তঃউপজেলা/থানা, আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগ এবং যে কোনও উপজেলা কিংবা জেলা থেকে সিটি করপোরেশনে।

নানা কারণে দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ রয়েছে এই বদলি কার্যক্রম। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনে বদলি প্রক্রিয়ার পাইলটিং শুরুর ঘোষণা দিয়েও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তা শুরু করতে পারে নি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানিয়েছেন, চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলেই বদলি কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। অনুমোদিত শিক্ষক পদ ৪ লাখ ২৮ হাজার ৭০১টি। সহকারি শিক্ষকের ৪৫ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের জন্য সারাদেশে তিন ধাপে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষার ফল এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা (সিলেট বাদে) গত ২০ মে অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা হবে ৩ জুন। তিন ধাপে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের জুলাইয়ের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এবার অনলাইনে বদলি কার্যক্রম চলবে। এ পদ্ধতিতে কোনও একটি উপজেলায় বদলি কার্যক্রমের পাইলটিং শুরু হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সব শিক্ষকের বদলি কার্যক্রম চলবে।

বদলি কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষা চলছে। এই মুহূর্তে বদলি কার্যক্রম শুরু হলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। আমরা আগামী জুনে আশা করছি, উপজেলা বা থানার ভেতরে বদলি কার্যক্রম শুরু করবো। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্থানের বদলির ব্যবস্থা করা হবে।’

তিনি বলেন, অনলাইনে বদলি কার্যক্রমের সফটওয়্যার প্রস্তুত আছে। ভোগান্তি দূর করতে এই সেবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিও নিশ্চিত হবে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের অভিযোগ, অনলাইনে বদলি কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়ার পর দুই বছরের বেশি সময় প্রাথমিকের শিক্ষক বদলি বন্ধ রয়েছে। বলা হয়েছিলো, করোনাসংক্রান্ত বিধিনিষেধ উঠে গেলে অনলাইনে বদলি শুরু হবে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও বদলি কার্যক্রম বন্ধ।

গত বছরের মার্চে অনলাইনে শিক্ষক বদলির প্রশিক্ষণ শেষে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় পাইলটিং শুরু হওয়ার কথা ছিলো। পর্যায়ক্রমে শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিয়ে সারাদেশে অনলাইনে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিলো। তবে মন্ত্রণালয় জানায়, করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পাইলটিং কার্যক্রমই শুরু করা সম্ভব হয় নি।

গত মার্চ মাসে বদলি প্রক্রিয়া চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আইনি নোটিশ দেন এক শিক্ষক। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন), উপ-পরিচালক, সব বিভাগীয় কার্যালয় এবং সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ ৭২ জনকে এ নোটিশ পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বদলির জন্য ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি নির্দেশিকা (সংশোধিত)-২০১৯’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নির্দেশিকার ধারা ১.১-এ সাধারণভাবে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষা বছরের জানুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে একই উপজেলা/থানা, আন্তঃউপজেলা/থানা, আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগ এবং যে কোনও উপজেলা/জেলা থেকে সিটি করপোরেশনে বদলি করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ২০১৯ সালের পর থেকে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দেশের শিক্ষকেরা। বিশেষ করে নারী শিক্ষকেরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যদিও সরকারি অন্যান্য দপ্তরে যথারীতি বদলি কার্যক্রম চালু রয়েছে।

২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি বন্ধ করে নির্দেশনা জারি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণজনিত কারণে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষকদের সব ধরনের বদলি বন্ধ রাখা সমীচীন।

যেভাবে অনলাইনে বদলি কার্যক্রম : প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, শিক্ষক বদলির বিদ্যমান পদ্ধতির ধাপগুলো বিশ্লেষণ করে সেবা দিতে বাস্তব সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা, ধীরগতি এবং পদ্ধতিগত শূন্যতা নির্ণয় করা হবে অনলাইন আবেদনে। শিক্ষকেরা তাঁদের শিক্ষক পিন (ই-প্রাইমারি সিস্টেম) ব্যবহার করে ওটিপি অথেনটিকেশনের মাধ্যমে লগইন করে নিজস্ব ইউআইয়ে (ইউজার ইন্টারফেস) প্রবেশ করে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের তথ্যাদি আগে থেকেই ডাটাবেজে সংরক্ষণ থাকায় শুধু বদলির ক্ষেত্র আন্তঃউপজেলা, আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগ এবং অন্তঃসিটি করপোরেশন এবং বদলির কারণ সিলেক্ট করে বদলির আবেদন করা যাবে। মাসিক রিটার্ন ও চাকরি বইয়ের ফটোকপি ইত্যাদি সংযুক্তির প্রয়োজন হবে না।

তবে ক্ষেত্রমতে স্বামী/স্ত্রীর কর্মস্থলের বা স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র, বদলির কারণ কিংবা প্রেক্ষাপটের আলোকে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র সংযুক্ত করতে হতে পারে। বিদ্যমান বদলির নীতিমালার শর্তাবলির আলোকে এমনভাবে সফটওয়্যারে সবকিছু সেট করা হয়েছে, যেনো অযাচিত কিংবা বদলির শর্ত পূরণ করে না এমন কেউ আবেদন করতে না পারেন। শূন্যপদের সব তথ্য ডাটাবেজে থাকায় শিক্ষকেরা আবেদনের সময়ই বিদ্যমান সব শূন্যপদ দেখতে পাবেন এবং এক বা একাধিক বিদ্যালয় বাছাই করে আবেদন করতে পারবেন।

সঠিকভাবে আবেদন জমা দিলে আবেদনকারী আবেদনের একটি পিডিএফ কপি এবং অ্যাপ্লিকেশন ট্র্যাকিং নম্বরসংবলিত সিস্টেম জেনারেটেড একটি রিসিপ্ট পাবেন এবং মোবাইলে নোটিফিকেশন পাবেন। 

তা ছাড়া শিক্ষক পিন ব্যবহার করে লগইন করে যে কোনও সময় নিজের ড্যাশবোর্ড থেকে আবেদনের বর্তমান অবস্থান জানতে পারবেন। সফটওয়্যারে প্রতিটি ধাপে সময় নির্ধারণ করা থাকবে। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনটি অগ্রসর হতে থাকবে। আবেদনকারীর বদলির প্রেক্ষাপটের আলোকে সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কোর নির্ধারিত হবে। ফলে আবেদনকারী একাধিক হলে অগ্রাধিকার তালিকাও সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হবে।

অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষক বদলি কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।