টিসিবির পরিবার কার্ড বিতরণে অনিয়মের তদন্ত হচ্ছে

টিসিবির পরিবার কার্ড বিতরণে অনিয়মের তদন্ত হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পরিবার কার্ড বিতরণে কোনও অনিয়ম হয়েছে কি-না, তা খতিয়ে দেখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে। দেশের ৬৪টি জেলায় ৪০টি দলের মাধ্যমে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, পরিবার কার্ড বিতরণে অনৈতিক প্রভাব বা আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আছে কি-না।

রাজধানীর লালমাটিয়ায় সোমবার (১৭ অক্টোবর) মাসিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির অক্টোবর মাসের পণ্য বিক্রি উদ্বোধনের সময় এসব কথা বলেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। 

তিনি আরও বলেন, ‘টিসিবির এই পণ্য যাতে নিম্ন আয়ের মানুষেরাই পায়, তা নিশ্চিত হতে স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা করা হয়েছে। এরপরও যদি কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি থেকে থাকে, সেটা তদন্ত করে দেখতে সব জেলায় সরকারের দল যাচ্ছে। ৪০টি দল সারা দেশে একটি জরিপের মাধ্যমে এই তদন্তকাজ শেষ করবে। আমরা চাই যাঁদের প্রকৃত চাহিদা আছে, তাঁরাই পণ্যগুলো পান।’

লালমাটিয়ায় ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করে চলে যান বাণিজ্যমন্ত্রী। তখন পরিবার কার্ডের বিপরীতে টিসিবির পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকে। সেই লাইনেই এক দম্পতির হাতে দুটি পরিবার কার্ডের সন্ধান পান বাঙলার কাগজ ও ডনের এই প্রতিবেদক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবারের নারী সদস্য বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দ্রব্যমূল্যের চাপ সামলাতে না পেরে এই পথের আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে গত আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে টিসিবির পরিবার কার্ড বিতরণ কার্যক্রমে প্রকৃত উপকারভোগী অনেকে বাদ পড়েছেন বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় দাবি করা হয়। এই বাদ পড়াদের ৮০ শতাংশই মনে করেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তাঁরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন নি। পরিবার কার্ড পেতে ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ থেকে ২ শ টাকা পর্যন্ত ঘুষও দিতে হয়েছে।

ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, সরকার এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দিচ্ছে। তাতে করে অন্তত পাঁচ কোটি লোক উপকৃত হচ্ছে। এই কার্ডধারীরা সরকারের ওএমএস কর্মসূচির ১০ কেজি চালও কিনতে পারছে, যা এসব মানুষের বাজার খরচের চাপ অনেকটা কমিয়ে দিচ্ছে।

টিসিবি গতকাল জানায়, চলতি মাসে পরিবার কার্ডধারী একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি ও দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম রাখা হবে ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা এবং প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ টাকায় বিক্রি করা হবে।

অবশ্য আজকে লালমাটিয়ায় যেখানে অক্টোবর মাসের পণ্য বিক্রি উদ্বোধন করা হয়, সেখানে ক্রেতাদের পেঁয়াজ দেওয়া হয় নি। আমদানি করা পেঁয়াজ না আসায় কয়েক দিন পর পেঁয়াজ বিক্রি হবে বলে জানান টিসিবির কর্মকর্তারা।

দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান চাপে মাসে একবার পণ্য পেয়ে অনেক কার্ডধারী সন্তুষ্ট নন। মাসে একাধিকবার পণ্য দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন কেউ কেউ। মোহাম্মদপুর এলাকার টিসিবির পরিবার কার্ডধারী শামা পারভিন বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমার পরিবার বড়, এই পণ্য দিয়ে মাত্র ১০ দিনের মতো চলবে। তাই আরও বেশি পণ্য পেলে ভালো হতো।’

এ ব্যাপারে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, টিসিবির কেনাকাটা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ফলে চাইলেই মাসে একাধিকবার পণ্য দেওয়া সম্ভব না। 

‘তা ছাড়া এখনো পরিবার কার্ড সব এলাকায় বিতরণ করা সম্ভব হয় নি।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান প্রমুখ।