ডিমে কারসাজি : হালি ৪৮ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়, ব্যবসায়ীদের দাবি ৫০

ডিমে কারসাজি : হালি ৪৮ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়, ব্যবসায়ীদের দাবি ৫০

বিশেষ প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; কালাম আঝাদ : বাণিজ্যমন্ত্রীর বলার পরপরই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, প্রতিটা ডিমের দাম ১২ টাকা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ডিম ১২ টাকা দরে, ডিমের হালি ৪৮ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। ব্যবসায়ীদের এটি স্পষ্ট জানানো হয়েছে। সাড়ে ১০ টাকা উৎপাদন খরচ হলে ১২ টাকায় বিক্রি হলে উৎপাদকরা অনেক লাভ করতে পারবেন।’

ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে রোববার (১৩ আগস্ট) সচিবালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। আর ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, প্রতিটি ডিম সাড়ে ১২ টাকা করে ৫০ টাকা হালিতে বিক্রির জন্য। অথচ বর্তমানে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় ডজনে ডিম বিক্রি হচ্ছে। যেখানে প্রতি হালির দাম পড়ছে অন্তত ৫৫ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৫ কোটি পিস। আর উৎপাদন হচ্ছে ৪ কোটি পিস। এ কারণেই দাম বেড়ে গেছে বলে দাবি তাঁদের। তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্কটের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। আর একইদিন সকালে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ডিমের যদি সঙ্কট হয়, প্রয়োজনে আমদানি করা হবে, তবুও দাম নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, অতিরিক্ত মুনাফা করা হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নেবে। কেউ অন্যায্য লাভ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্যই ভোক্তা অধিকার ব্যবস্থা নেবে।

বর্ষায় খামারের ক্ষতি হয় বলে প্রতি বছর এই সময় ডিমের দাম কিছুটা বাড়ে। তবে এবার দাম বৃদ্ধির আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ডজন হিসেবে ডিমের দাম উঠেছে ১৬৫ টাকায়।

বাজারে বাদামি ডিমের হালি এখন ৬০ টাকা। সাদা ডিম ৫৫ টাকা। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। পাইকারিতেই বাদামি ডিমের শ বিক্রি হচ্ছে ১২৭০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকা ৭০ পয়সা। হালি হিসেবে করলে আসে ৫০ টাকা ৮০ পয়সা। আড়তে ১ শ সাদা ডিম ১  হাজার ২ শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যে দামটা ছিলো এক হাজার ৮০ থেকে ১১ শ টাকা।

গত বছরের এই সময়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম উঠেছিলো ১৫৫ টাকা। তবে বর্ষা শেষে তা আবার কমে গিয়েছিলো। গতমাস পর্যন্ত ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় ডিম বিক্রি হয়। এরপরই বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডিমের বাজারের মাত্র ২০ শতাংশ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের দখলে। কিন্তু বাকি ৮০ শতাংশ ডিমের দাম তারাই নিয়ন্ত্রণ করে।

মন্ত্রী বলেন, আজ অংশীজনদের সঙ্গে বসে আমাদের সার্ভে অনুযায়ী দেখিয়েছি, সাড়ে ১০ টাকা উৎপাদন খরচ হলে ১২ টাকায় বিক্রি হলে তারা প্রচুর লাভ করতে পারবে। এর বাইরে কেউ অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করলে ভোক্তা অধিকার আইনের আওতায় যাঁরা কর্তৃপক্ষ, তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

কমেছে সয়াবিন ও চিনির দাম : আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় দেশের বাজারেও সয়াবিন তেলের দাম আরও কমেছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা কমিয়ে ১৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রোববার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১৫৪ টাকা, ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ২৩ টাকা কমিয়ে ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নির্ধারণ করা এই দাম সোমবার (১৪ আগস্ট) থেকে কার্যকর হবে বলেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এদিকে চিনির দাম প্রতি কেজি ৫ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। রোববার (১৩ আগস্ট) অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ১৩৫ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ১৩০ টাকা এবং প্রতি কেজি পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি ১৪০ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হলো। নতুন এই দাম সোমবার (১৪ আগস্ট) থেকেই কার্যকর হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।