বিনা ভোটে জিতে অপহৃত প্রার্থী বললেন, ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পেয়েছি’

বিনা ভোটে জিতে অপহৃত প্রার্থী বললেন, ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পেয়েছি’

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের ঘটনার পর নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন অভিযুক্ত প্রার্থী লুৎফুল হাবীব। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী আর কোনো প্রার্থী না থাকায় শেষ পর্যন্ত অপহৃত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ভোট ছাড়াই সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল লতিফ শেখ এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রার্থীর ভাই এমদাদুল হকের কাছে হস্তান্তর করেছেন। দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর স্বজনেরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেলোয়ার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলাম। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হব, এমনটা কখনোই ভাবিনি। তাই শুধু এটুকুই বলব, আমি মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পেয়েছি।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব ও উপজেলার কলম ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের কর্মী দেলোয়ার হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়ে দুজনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেল চারটা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল। তার আগের দিন রবিবার বিকেলে লুৎফুল হাবীব নির্বাচন থেকে সরে যান। পরে বৈধ প্রার্থী হিসেবে দেলোয়ারকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার তাঁর বড় ভাই এমদাদুল হকের হাতে নির্বাচিত হওয়ার প্রত্যয়নপত্র (ফরম-ঙ, বিধি-২৪) হস্তান্তর করা হয়। তবে ফলাফলের গেজেট পেতে তাঁকে ২০ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এমদাদুল হক বলেন, তাঁর ভাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর পক্ষে তিনি ও স্বজনেরা মঙ্গলবার দুপুরের পর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি একটি প্রত্যয়নপত্র তুলে দিয়েছেন। এতে লেখা আছে, দেলোয়ার হোসেন সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল লতিফ শেখ বলেন, চেয়ারম্যান পদে দুজন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও একজন রবিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্ত একমাত্র প্রার্থী দেলোয়ার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। তাই বৈধ প্রার্থী হিসেবে তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে। তবে গেজেট প্রকাশিত হতে আরও সময় লাগবে।

১৫ এপ্রিল ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন, তাঁর ভাই এমদাদুল হক (কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) ও কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যায় মুমূর্ষু অবস্থায় সিংড়ার সাঐল গ্রামে নিজ বাড়ির সামনে দেলোয়ারকে ফেলে রেখে যায়। ওই দিনই তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর ভাই মুজাহার আলী বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও মারধরের মামলা করেন।

পুলিশ এ পর্যন্ত দুই দফায় তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং অপহরণের কাজে ব্যবহৃত দুটি গাড়ি জব্দ করেছে। সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ ও গ্রেপ্তার আসামির জবানবন্দিতে ঘটনার সঙ্গে লুৎফুল হাবীবের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। পরে বোনের জামাই এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ তাঁকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামী লীগ তাঁকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার নির্দেশনা দেয়। পরে রবিবার দুপুরে প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন লুৎফুল হাবীব।