ডন প্রতিবেদন : ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র মুম্বাই শহরের ১২টি স্থানে হামলা চালায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা লস্কর-ই-তৈয়বার ১০ জঙ্গি। সেই আক্রমণে তাৎক্ষণিকভাবে ১৮০ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং ৩ শতাধিক মানুষ গুরুতর আহত হন, যাঁদের অনেকেই পরে মারা যান অথবা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিলো মুম্বাইয়ের দি তাজমহল প্যালেস হোটেল এবং ওবেরাই ট্রাইডেন্ট হোটেলে হামলা। ৬৪ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় সেই হোটেলের ২শ জিম্মিকে মুক্ত করতে পেরেছিলো ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।
২৬/১১ নামে পরিচিত ওই হামলায় আজমল কাসাব নামে একজন মাত্র হামলাকারী নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি নিশ্চিত করেন লস্কর-ই-তৈয়েবাসহ পাকিস্তানকেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠন এই হামলার পরিকল্পনা করেছিলো। হামলাকারীদের সবাই পাকিস্তান থেকে মুম্বাইয়ে আসে। হামলার সময় পাকিস্তান থেকেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে জঙ্গিরা হাইজ্যাক করা একটি মাছ ধরার ট্রলারে করে মুম্বাই পৌঁছায়। মুম্বাই পৌঁছানোর পর জঙ্গিরা পুলিশ ভ্যানসহ কয়েকটি গাড়ি হাইজ্যাক করে এবং ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। তাদের আক্রমণের প্রথম লক্ষ্যস্থান ছিলো মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস রেলওয়ে স্টেশন। ভারতীয় সময় রাত নয়টা বিশে কাসাব এবং অন্য একজন পাকিস্তানি জঙ্গি স্টেশনে ভিড়ের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করতে শুরু করে। রেলওয়ে স্টেশনের এই হামলা ৯০ মিনিট ধরে চলেছিলো। জঙ্গিরা এখানে ৫৮ জন মানুষকে হত্যা করে এবং শতাধিক লোক আহত হন। হামলায় অংশগ্রহণকারী জঙ্গি কাসাব এবং আরেক জঙ্গি ইসমাইল কামা হাসপাতালে হামলা চালিয়েছিলো।
মুম্বাই হামলার পর ভারতের অভিযোগের ভিত্তিতে পাকিস্তানে তদন্ত শুরু হয়। ২৬/১১ হামলার মূল চক্রান্তকারী হিসাবে হাফিজ সাইদ এবং জাকিউর রহমান লকভির নাম উঠে এসেছিলো। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে লকভিকে গ্রেপ্তার করা হলেও ২০১৫ সালে জামিন পেয়ে যান তিনি। কিন্তু পাকিস্তানের উপর চাপ অব্যাহত থাকায় ২০২০ সালে হাফিজ সাইদকে একটি অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। লখভিকেও একটি আর্থিক অনিয়ম মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু, তাদের কাউকেই ২৬/১১ এর মামলায় যুক্ত করা হয় নি।