হিট স্ট্রোকে পুলিশসহ আরও ৯ জনের মৃত্যু

হিট স্ট্রোকে পুলিশসহ আরও ৯ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় তাপমাত্রা আবারও বেড়েছে। ঈশ্বরদী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, রাজশাহী, মংলা ও খেপুপাড়ায় তাপমাত্রা ছিলো ৪০ ডিগ্রিরও ওপরে। ৪১ জেলার তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রার পারদ এমন থাকলে বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে গরমের অনুভূতি অনেক বেশি হয়। আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, তাপমাত্রা আজ বুধবারও (২৪ এপ্রিল) বেশি থাকবে। এদিকে হিট স্ট্রোকে প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। মঙ্গলবারও একজন পুলিশ কনস্টেবলসহ রাজধানী ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চারদিনে সারাদেশে হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন অন্তত ৩৩ জন।

প্রাণঘাতী এই অসহ্য গরমে সবাই এখন চাতকের মতো তুমুল বৃষ্টির জন্য অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। সিলেটসহ কিছু স্থানে বিক্ষিপ্ত যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তাতে পথের ধুলোর মরণ হলেও মোটেই স্বস্তি মিলছে না। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, টানা ভারী বর্ষণ ছাড়া এই দাবদাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

জানা গেছে, পটুয়াখালীর বাউফলে হিট স্ট্রোকে শাহ আলম (৫০) নামের এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ঢাকায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ছিলেন। তিনি ছুটিতে গ্রামের বাড়ি বাউফল যান। সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ৯টায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁকে বাউফল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে বরিশালে পাঠানো হয়। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা যান।

রাজধানীর গুলিস্তান টোল প্লাজার পাশের রাস্তায় আলমগীর শিকদার (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আলমগীর যাত্রাবাড়ীর পশ্চিম শেখদি এলাকার মৃত জমির শিকদারের ছেলে। আর সিরাজগঞ্জের তাড়াশে কৃষক আফসার আলী ও হাসান আলী, নাটোরের বড়াইগ্রামে কৃষক বকুল হোসেন, জামালপুরে মরিচ ব্যবসায়ী গোলাম রাব্বানী, বরগুনার আমতলীতে অজিতুন নেসা, কুমিল্লার বুড়িচংয়ে শ্রমিক মুজিবুর রহমান ও খুলনার আড়ংঘাটায় ৬০ বছরের অজ্ঞাতনামা একজন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চার নির্দেশনা : হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মঙ্গলবার চার নির্দেশনা জারি করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বিদ্যমান আছে। এ অবস্থায় সুস্থ থাকতে সতর্কতার কোনও বিকল্প নেই। নির্দেশনাগুলো হলো : ১. তীব্র গরম থেকে দূরে থাকুন, মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিন। ২. প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করুন। হেপাটাইটিস এ, ই, ডায়রিয়াসহ প্রাণঘাতী পানিবাহী রোগ থেকে বাঁচতে রাস্তায় তৈরি পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করুন। ৩. গরম আবহাওয়ায় ঢিলেঢালা পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরুন, সম্ভব হলে গাঢ় রঙিন পোশাক এড়িয়ে চলুন। ৪. গরম আবহাওয়ায় যদি ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, বমি বমি ভাব দেখা দেয়, তীব্র মাথাব্যথা হয়, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়, খিঁচুনি ও অজ্ঞান হওয়ার মতো কোনও লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে যান এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ঢাকায় ফের বেড়েছে তাপমাত্রা : পরপর দুইদিন তাপমাত্রা খানিকটা হ্রাস পাওয়ার পর মঙ্গলবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আবার বেড়েছে। আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী তিনদিন তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই অবস্থা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। চলতি এপ্রিল মাসের বাকি সময়টা তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। গত শনিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর তাপমাত্রা ছিলো ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিও ছিলো এ বছরে রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তবে রবিবার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর তাপমাত্রা ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যায়। ওইদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সোমবার ঢাকার তাপমাত্রা আরও কমে হয়েছে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের কোথাও কোথাও আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও আগামী এক সপ্তাহে পুরো দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

মে মাসে বৃষ্টি হতে পারে : আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, এপ্রিলে দাবদাহ কমছে না। বৃষ্টির সম্ভাবনাও নেই। মে মাসের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। তখন তাপমাত্রা কমে আসতে পারে।