কুমিল্লায় সালিশে নারী মানবাধিকারকর্মীকে মারধর! : মামলা ‘নিচ্ছে না’ পুলিশ।
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলা কাগজ; কুমিল্লা : কুমিল্লার মুরাদনগরে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আয়োজিত শালিসে মরিয়ম বেগম নামের এক মানবাধিকারকর্মীকে ব্যাপক মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। গত ২৮ জুন রাতে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের ভিডিও আজ শুক্রবার (পহেলা জুলাই) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অথচ এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা নেয় নি পুলিশ।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, উপজেলার নবীপুর (পশ্চিম) ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের সামনে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন ও তার দলবল এ ঘটনা ঘটায়। বর্তমানে আহত ওই নারী দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে ঘটনার ৩ দিন অতিবাহিত হলেও ‘প্রভাবশালী’ ওই চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে পারছেন না ভুক্তভোগী নারী মানবাধিকারকর্মী। এতে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার মুরাদনগরে পূর্ববিরোধ এবং গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার অভিযোগ এনে গত ২৮ জুন রাতে মুরাদনগর উপজেলার ত্রিশ গ্রামের নারী মানবাধিকারকর্মী এবং ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল এইড ফাউন্ডেশনের কর্মী মরিয়ম বেগমকে লোক মারফত কোম্পানীগঞ্জ বাজারে ডেকে আনেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন।
এ সময় এক ব্যবসায়ীর দোকানে সালিশে বসে।
ভিডিওতে দেখা যায়, সালিশ চলাকালে নবীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেনের উপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন ও তার দলবল ওই নারীকে ব্যাপক মারধর করেন। এক পর্যায়ে আত্মরক্ষায় ওই নারী এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করেন। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান তার আসনে বসে এসব দৃশ্য উপভোগ করেন।
হামলা ও মারধরের এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
নির্যাতনের শিকার মরিয়ম বেগম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভিপি জাকির হোসেন পরিকল্পিতভাবে আমাকে ডেকে নিয়ে সালিশে বসেন। এ সময় চেয়ারম্যানের সামনেই তাঁর ভাতিজা মেম্বার (ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য) দেলোয়ার হোসেন এবং তার দলবল আমাকে শ্লীলতাহানি এবং নির্যাতন করেন। আমি আত্মরক্ষার্থে সালিশ থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তারা আমাকে জোরপূর্বক ধরে এনে ব্যাপক নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন আমাকে উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় প্রভাবশালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের ‘নির্দেশে’ থানায় মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। আমি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় হামলাকারী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমাকে গালমন্দ করায় আমি মারধর করেছি।’
‘কিন্তু গালমন্দ করলেই কি মারধর করা যায়?’ এমন প্রশ্নের কোনও জবাব দিতে পারেন নি তিনি।
জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বাঙলা কাগজ ও ডনের কাছে দাবি করেন, ‘পূর্বের সামান্য একটি বিরোধ নিয়ে আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। এ সময় আমরা তা মীমাংসা করে দিয়েছি। কেনো ওই নারীকে মারধর করা হয়েছে, আমি তা অবগত নই।’
এ বিষয়ে আজ শুক্রবার (পহেলা জুলাই) রাতে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাশিম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘ওই নারী শুরুতে একটি সাধারণ ডায়েরি করতে এসেছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা তাঁকে নিয়মিত মামলা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’
‘অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’