বাঙলা কাগজ ও ডনে প্রতিবেদন : সেই তামান্নাকে ফোন দিলেন প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রেহানা।

বাঙলা কাগজ ও ডনে প্রতিবেদন : সেই তামান্নাকে ফোন দিলেন প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রেহানা।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলা কাগজ; বেনাপোল : বাঙলা কাগজ ও ডন এবং আরও কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর উচ্চ মাধ্যমিকেও জিপিএ-৫ পাওয়া তামান্না আক্তারকে ফোন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। ঘড়ির কাঁটায় তখন সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬ টা ৫৬ মিনিট। পড়াশুনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তামান্না। হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে ফোন। ফোন রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশের কন্ঠস্বর, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছিলাম। আমি কি তামান্নারসঙ্গে কথা বলছি। ফোনের ওপাশের কণ্ঠস্বর শুনে ঘাবড়ে যান তামান্না আক্তার। এরপর তাঁকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষণিকের জন্য তামান্না বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে কেঁদেই ফেললেন। তাঁকে কান্না থামাতে বললেন প্রধানমন্ত্রী। কান্না থামিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম দেন তামান্না। এ সময় তামান্না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারসঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ এবং তাঁর স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে চান। প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি তামান্নাকে ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’ একটা আবেদন করার পরামর্শ দেন। ওই ট্রাস্টের মাধ্যমে তামান্নাকে সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তামান্নারসঙ্গে টানা ৪ মিনিটের কথাপোকথনে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে একাধিকবার সাহস হারাতে নিষেধ করেন। বলেন, ‘সাহস আর মনোবল থাকলে তুমি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে।’ এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তামান্নার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। ফোন রিসিভ করতেই তামান্নার ফোনের ওপাশের কন্ঠস্বর বলেন, আমি লন্ডন থেকে শেখ রেহানা বলছি। আমি কি তামান্না আক্তারেরসঙ্গে কথা বলছি। তখন কান্না করতে থাকেন তামান্না। কান্না থামাতে বলে শেখ রেহেনা বলেন, ‘কেঁদো না। টানা ভালো রেজাল্ট করায় তোমাকে অভিনন্দন। তোমার সংগ্রামের কথা শুনেছি। তুমি খুব সাহসী। তুমি এগিয়ে যাও। আমরা দুই বোন বেঁচে থাকা পর্যন্ত তোমাকে সহযোগিতা করে যাবো।’ ‘যাঁরা সাহস রেখে চলে, তাঁরা কখনো হেরে যায় না।’ পিইসি, জেএসসি ও এসএসসির পর এবার এইচএসসিতেও পা দিয়ে লিখেই জিপিএ-৫ পেয়েছেন ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী’ তামান্না আক্তার। এ বছর যশোর শিক্ষা বোর্ডের বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। জন্ম থেকে ২ হাত ও এক পা না নেই তামান্নার। এক পা-ই তাঁর একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সেই পা দিয়ে লিখেই লক্ষ্যেপূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তামান্নার বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে। তামান্নার বাবা রওশন আলী স্থানীয় ছোট পোদাউলিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক। মা পারভীন শিল্পী গৃহিণী। তাঁদের ৩ সন্তানেরমধ্যে তামান্না সবার বড়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি পরিবারের আর্থিক অভাব-অনটনও তামান্নার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বহুবার। তবে সব বাধা ঠেলেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এখন লক্ষ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে নেওয়া।