চান্দিনার ইউপি চেয়ারম্যান সুমনের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ

চান্দিনার ইউপি চেয়ারম্যান সুমনের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার ৫ নম্বর কেরণখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুমন ভূঞার বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তিনি সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা দিতে ‘মারাত্মক’ স্বজনপ্রীতি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি প্রকৃত সুবিধাভোগী বয়স্ক ও গরীব ব্যক্তিদের সরকারি সহায়তার চাল এবং বয়স্ক ভাতা না দিয়ে কিছুক্ষেত্রে তিনি ভুয়া নাম-ঠিকানা বানিয়ে সেগুলো আত্মসাৎ করার পাশাপাশি নির্বাচনে তাঁর জন্য খেটেছেন, এমন ব্যক্তিদেরকেই দিচ্ছেন। সুমন ভূঞার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি এলজিইডির কাজে ভাগ-বাটোয়ারা হারে কমিশন নিচ্ছেন। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের মাধ্যমে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া ব্যক্তির পক্ষে কাজ করাদের জন্ম নিবন্ধন দিতেও বিলম্ব করছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য রোববার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে সুমন ভূঞাকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘এসব অভিযোগের ব্যাপারে আমার কোনও মন্তব্য নেই।’ এর আগে বাঙলার কাগজ ও ডন সম্পাদক ও প্রকাশক কালাম আঝাদ সুমন ভূঞাকে ফোন দিয়ে তাঁর ২ ছেলের জন্ম নিবন্ধনের কাগজ আটকে রাখার কারণ জানতে চান। উল্লেখ করা যেতে পারে, বাঙলার কাগজ ও আওয়ার ডন সম্পাদক ও প্রকাশকের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ৫ নম্বর কেরণখাল ইউনিয়নে। তিনি নির্বাচনের সময় নৌকা প্রতীকের সমর্থন করেছিলেন। গত কয়েকদিন আগে তিনি তাঁর ২ ছেলের জন্ম নিবন্ধনের জন্য লোক মারফত সকল কাগজপত্র পাঠান। কিন্তু সুমন ভূঞা ওটিপিসহ নানান কথা বলে টালবাহানা শুরু করেন এবং জন্ম নিবন্ধনের কাগজ প্রস্তুত করাতে কাল বিলম্ব করেন। পরে আবারও সম্পাদক ও প্রকাশক সকল কাগজপত্র পাঠান। পরে সবকিছু প্রস্তুত হওয়ার পর যখন সুমন স্বাক্ষর দেবেন, তখন কাগজপত্রগুলো দেখে সম্পাদকের পাঠানো লোককে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিককে এসে কাগজগুলো নিতে বলবি।’ পরে এ ব্যাপারে জানার জন্য সম্পাদক ফোন দিলে তিনি কথা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলা শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে বলেন, ‘যান, আপনি পারলে প্রতিদিন আমার বিরুদ্ধে একটি করে নিউজ করেন।’

সূত্র জানায়, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন সুমন ভূঞা। তিনি দীর্ঘদিন চান্দিনার বর্তমান সাংসদ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের সঙ্গে থাকায় একটি বড় অংশ তাঁকে ভোট দেয়। সবমিলিয়ে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেন। অথচ সুমন ভূঞা নির্বাচনে জয়লাভ করার পর অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপালের ‘সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে’ ব্যাপক অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এতে অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের সুনামও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

জানা গেছে, নির্বাচনে জয়লাভ করার পরপরই নৌকা প্রতীকের সমর্থন করা ব্যক্তিদের সরকার প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধার জায়গা থেকে সকল নাম কর্তন করে দেন সুমন ভূঞা। এক্ষেত্রে তিনি তাঁর ভূঞা বাড়ীর প্রতিটি পরিবারের সদস্যের নাম এসব জায়গায় অন্তর্ভুক্ত করেন। যেখানে তিনি ভূঞা বা ভূঁইয়া শব্দটি চালাকি করে ব্যবহার করেন নি। তবে কিছুক্ষেত্রে ভূঁইয়া ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে যাঁরা নিম্ন আয়ের নন বা বয়স্ক নন; তাঁদেরকেও সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন সুমন ভূঞা।

সূত্র জানায়, সরকার প্রদত্ত ভিজিডি, ভিজিএফ এবং বয়স্ক ভাতার ক্ষেত্রে চরম অন্যায় ও অনিয়ম করছেন সুমন ভূঞা। এক্ষেত্রে তিনি প্রকৃত সুবিধাভোগীদের এসব না দিয়ে কিছুক্ষেত্রে সচ্ছল এবং কিছুক্ষেত্রে ভুয়া নামধারীদের মাধ্যমে আত্মসাৎ করছেন।

কেরণখাল ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা ব্যক্তিদের একজনকেও তিনি সরকার প্রদত্ত একটি সুবিধাও দিচ্ছেন না। বরং যাঁদের আগে নাম ছিলো; তাঁদের সকলের নামও তিনি কর্তন করে দিয়েছেন।

সার্বিক ব্যাপারে জানার জন্য রোববার (৩০ অক্টোবর) চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীলকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে শুনলাম। এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে স্থানীয় জনসাধারণ বাঙলার কাগজ ও ডনের কাছে বলেছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ নম্বর কেরণখাল ইউনিয়নে একটু তদন্ত চালালেই সকল ধরনের অনিয়মের সত্যতা জানার সঙ্গে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।