ঢাবিতে তরুণীকে যৌন হেনস্তা : কী ঘটেছিলো সেদিন রাতে?

ঢাবিতে তরুণীকে যৌন হেনস্তা : কী ঘটেছিলো সেদিন রাতে?

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের সামনে দিয়ে রিকশায় করে যাওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা মোটরসাইকেল চালরকের দ্বারা যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার শিকার হন উম্মে হাবিবা অরনী। ট্রমার কারণে এখনো ঠিকমতো খেতে বা ঘুমাতে পারছেন না তিনি। গত বুধবার (৮ জুন) রাতে এ ঘটনা ঘটে।

ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার জামা ছেঁড়ার প্রসঙ্গ নিয়ে বেশি হাইলাইট হচ্ছে। আমাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছে। সেক্সুয়ালি এসল্ট করেছে।’ 

ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ধানমণ্ডি থেকে বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় পুরান ঢাকায় বাড়ির উদ্দেশে রিকশায় উঠেন তিনি। তাঁকে রিকশায় উঠিয়ে দেন তাঁর ভাই। রিকশায় উঠে তিনি হেডফোনে গান শুনছিলেন। ফলে অন্যমনস্ক ছিলেন। সায়েন্সল্যাব-নিউমার্কেট-নীলক্ষেত পেরিয়ে এফ রহমান হলের কাছাকাছি এলে পেছন থেকে বাইক চালিয়ে রিকশার বাম দিক ঘেঁষে এগিয়ে আসে মুখখোলা হেলমেট পরা মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। রাত তখন সোয়া ১২টা।

লোকটি বাম হাত দিয়ে বাইকের ক্লাচ ধরে রেখে ডান হাত দিয়ে খামচে ধরে চলমান রিকশায় বসা অরনীর বুকে। আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে উঠেন অরনী। এক পর্যায়ে পরনের কামিজটি গলার কাছে ছিঁড়ে যায়।

অরনী বলেন, ‘আমি কোনও অর্নামেন্টস পরা ছিলাম না। হাতে ফোন ছিলো, ব্যাগ ছিলো। সে কোনও কিছু ধরে নি। শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছে আমাকে, সেক্সুয়ালি এসল্ট করেছে। পরে যাওয়ার সময় আঙুল উচিয়ে উচিয়ে আমাকে কী যেনো বলে গিয়েছে। কিন্তু আমার কানে হেডফোন থাকায় তা আমি স্পষ্ট শুনতে পারি নি। তখন আমি রিকশাওয়ালা মামাকে বলি, লোকটিকে ধরার জন্য। কিন্তু উনি ঘাবড়ে যান। এ সময় আমি কিন্তু একটি বাইক নিয়ে উনার পেছন পেছন গিয়ে উনাকে ধরার চেষ্টাও করতে পারতাম। কিন্তু আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আবার আমার পাশেই কিন্তু থানা ছিলো। কিন্তু আমি ভয়ে সেখানে যেতে পারি নি।’

অরনী আরও জানান, এ ঘটনায় মানসিকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি বাইকের নম্বরপ্লেটও খেয়াল করতে পারেন নি। 

তিনি বলেন, ‘তখন ফার্স্ট অ্যান্ড মেইন কনসার্ন ছিলো, আমার নিরাপদে বাসায় পৌঁছাতে হবে। সে আবার এসে আমাকে অ্যাটাক করতে পারে।’

বাসায় ফেরার পর প্রতিবাদের উদ্দেশে ছেঁড়া জামার ছবিসহ ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন রাত একটা এগারো মিনিটে। পোস্টে লেখেন, ‘এই দেশে থাকতে চাইলে বিনিময়ে রাস্তাঘাটে গায়ে হাত দেওয়ার পারমিশন দিতে হবে? নাকি এখন সন্ধ্যার পর বাসার বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেবো? আর কারে গিয়ে বললে, একটু স্বাভাবিক সিকিউরডভাবে এ দেশে বাঁচতে পারবো?’

ফেসবুক পোস্টে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে কমেন্ট করেন সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার আহসান ভূঁইয়া। 

এদিকে মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রথমে মামলার ব্যাপারে সম্মতি না দিলেও পরে আইনজীবীর আশ্বাসে রাজি হন অরনীর মা। পরে শুক্রবার (১০ জুন) শাহবাগ থানায় গিয়ে মামলা করলে পুলিশ একটি দুই সদস্যবিশিষ্ট টিম ঘটনাস্থলে পাঠায়। অরনী পুলিশকে জায়গা চিহ্নিত করে ঘটনার বিবরণ দেন।

ওদিকে মামলা দায়েরের পর পুলিশ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে বলেই জানিয়েছেন অরনীর আইনজীবী আহসান ভূঁইয়া। 

ব্যারিস্টার আহসান ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় মামলা না হলে অপরাধীদের মনে ভয় থাকবে না। তারা অপরাধ করার চেষ্টায় থাকবে। ফলে এখন পুলিশ এটি ভালোভাবে দেখতে পারবে।’ 

ট্রমা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বেগ পেতে হচ্ছে বলেই জানালেন অরনী। তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম। অ্যাজমা অ্যাটাক হচ্ছিলো, পেইন হচ্ছিলো। স্বাভাবিকভাবে ঘুমাতে পারছি না, খেতে পারছি না। পরিবারের সবাই পাশে থেকে মানসিক শক্তি যোগাচ্ছে।’

তিনি আরও জানালেন, আগে থেকেই রাতে চলাচলে অভ্যস্ত অরনী। একা একা ঘুরতেও পছন্দ করেন। রেডিও-টিভিতে লেট নাইট শো কিংবা ভয়েজ ডাবিংয়ের কাজের জন্য প্রায়ই রাত করে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে। কিন্তু কখনোই এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হন নি। 

তিনি জানালেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ ভাবতেন, এখানে আগে কখনো ভয় পেতে হয় নি। এখন শাহবাগ থানা থেকে রিকশায় করে একা বাড়ি ফিরতেও শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।

ব্যারিস্টার ভূঁইয়া জানান, মিডিয়াতে খবর আসার পর সবার টনক নড়েছে। ওসি তাঁকে বলেছেন, পুলিশের ওপরের মহল থেকেও চাপ আসছে। পুলিশ স্টেশন থেকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীকে শনাক্ত করার জন্য তাঁদের থানায় যেতে বলা হয়েছে।

সবাই যেভাবে বিষয়টা নিয়ে কথা বলছে, তা আরও অনেককে সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগাবে বলেই আশা ব্যারিস্টার আহসান ভূঁইয়ার। তাতে অপরাধ কমে যাবে বলেই মত তাঁর।