দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে বিল সংসদে

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে বিল সংসদে

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে জাতীয় সংসদে বিল তোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের অনুপস্থিতিতে তাঁর পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘আইন–শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে দুইদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।  

২০০২ সালে প্রথম এই আইনটি করা হয়েছিলো দুই বছরের জন্য। এরপর ৭ দফা এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে আইনটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ৯ এপ্রিল এই আইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আজ এ সংক্রান্ত বিল সংসদে তোলা হলো।

এর আগে বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় চিপ হুইপ মুজিবুল হক বলেন, ২০০২ সালে বিএনপি যখন আইনটি করে তখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এবং সব দলের পক্ষ থেকে এই আইনের সমালোচনা করা হয়েছিলো। দ্রুত বিচার আইন নাম কোর্টে কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা শেষ হয় খুব কম। সিআরপিসি মামলা যেভাবে চলে সেভাবেই চলে। শুধু গ্রেপ্তারের বেলায় এই আইন কার্যকর। এই আইন দিয়ে সরকার চাইলে সাধারণ মানুষ বা প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করতে পারে। কালকে অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে এই আইনের মাধ্যমে বর্তমানে যাঁরা সরকারে আছে, তাঁরা হয়রানির শিকার হবে। তিনি আইনটি স্থায়ী না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে এক-দুই বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ান, তবে আইনটি প্রত্যাহার করেন। নইলে আপনারা ভুগবেন, মানুষ ভুগবে।

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, জনগণের ওপর অত্যাচারের জন্য আইন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। যখন এটা করা হয়েছিলো আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করেছিলো। ২০০২ সালে এই আইন পাশের উদ্দেশ্য ছিলো আওয়ামী লীগসহ বিএনপির অন্যান্য যেসব বিরোধী দল ছিলো, তাঁদের অত্যাচার করা। কিন্তু গত ১৫ বছরে এই আইনের প্রয়োগ যেভাবে হয়েছে সেখানে প্রমাণ হয়েছে অভিযোগ ঠিক নয়। 

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, এই আইন দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজন। এই আইন থাকার কারণে অনেক রকম বিশৃঙ্খলা গত ১৫ বছরে হয় নি। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই আইন শুধু রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মী বা নেতৃবৃন্দের জন্য এই আইন ব্যবহার করা হয় নি। অনেক রকম সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা এই আইন প্রতিহত করেছে। এ কারণে এই আইনটি স্থায়ী করা উচিত। বিলে আইনটি স্থায়ী করা ছাড়া অন্য কোনও সংশোধনী প্রস্তাব করা হয় নি। অর্থাৎ আইনটির বিদ্যমান ধারা এখনকার মতোই থাকবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে চাঁদাবাজি, যানবাহন চলাকালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট করা, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র ক্রয়, বিক্রয়, গ্রহণ বা দাখিলে জোরপূর্বক বাধা প্রদান যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি গুরুতর অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অধিকতর উন্নতির লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছিলো। আইনটি প্রণয়নের সময় এর মেয়াদ ছিলো ২ বছর। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ক্রমান্বয়ে ৭ বার এর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ ১০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে ১৭ বছর থেকে ২২ বছর বৃদ্ধি করা হয় যার মেয়াদ ৯ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে শেষ হবে। দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অধিকতর উন্নতির জন্য এই আইনটি মেয়াদান্তে পুনঃ পুনঃ সময় বৃদ্ধি না করে স্থায়ীভাবে আইনে পরিণত করা প্রয়োজন।