সংসদে শেষ ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি

সংসদে শেষ ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংবিধানে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর এই অধিবেশন আহ্বান করেছেন। এটা ইংরেজি নতুন বছর ২০২৩ সালের প্রথম অধিবেশন। বছরের প্রথম অধিবেশনকে শীতকালীন অধিবেশনও বলা হয়ে থাকে। অধিবেশন শুরুর আগে বেলা ৩টায় সংসদ ভবনে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে। এই বৈঠকে এবারের অধিবেশনের মেয়াদ, অধিবেশন শুরুর সময় এবং আলোচ্যসূচি ঠিক করা হবে। কয়েকটি কারণে এবারের অধিবেশন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আবেগেরও। এমনকি কিছুটা অন্যরকমও বলা যেতে পারে। সংবিধান অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনের আজ প্রথম বৈঠকে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতির ভাষণ অনুমোদন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে এটিই হবে তার সংসদ অধিবেশনে দেওয়া শেষ ভাষণ। কারণ, আগামী এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হবে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংসদ অধিবেশনে আবদুল হামিদের শেষ ভাষণের কারণে এবারের অধিবেশনে অন্যরকম আবেগ কাজ করছে।

রাষ্ট্রপতির আগমন ও অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ সচিবালয় ইতিমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বরাবরের মতো এবারও রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভবনে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হবে। ভাষণ শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

উল্লেখ করা যেতে পারে, দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন আবদুল হামিদ। সংবিধান অনুযায়ী, আবদুল হামিদের আবারও রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধানের ৫০(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘একাধিক্রমে হউক না হউক—দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না।’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের  নেই। নির্ধারিত সময়েই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। যেহেতু তিনি (আবদুল হামিদ) দুই টার্ম থেকেছেন, সংবিধান অনুসারে তিনি আর থাকতে পারবেন না। তাই নতুন একজন নির্বাচিত হবেন।’

রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদ যখন আজ বছরের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন, সেই অধিবেশন থাকছে বিএনপিহীন। বিএনপি দলীয় সাতজন সংসদ সদস্য (একটি সংরক্ষিত আসনসহ) ইতিমধ্যে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তাদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয়টি আসনে আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি ভোট। ফলে উপনির্বাচনে যারা জয়ী হবেন, তারাও সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে এই অধিবেশনেই যোগ দিতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদ যখন সংসদে আজ শেষ ভাষণ রাখবেন, তখন শুধু বিএনপির পদত্যাগী এমপিদের আসনগুলো শূন্যই থাকবে না; সংসদে তখন উপস্থিত থাকবেন নিজেদের কলহে পুড়তে থাকা সাংবিধানিক বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপিরা। মাঝখানে সপ্তাহখানেক বাদ দিয়ে টানা এক বছর ব্যাংককে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরা বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ আজ সংসদে যাবেন। উপস্থিত থাকবেন সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরও, চেয়ারম্যান হিসেবে দল পরিচালনার ক্ষেত্রে যার ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের বিষয়টিও এখন পর্যন্ত অমীমাংসিত। দল থেকে বহিষ্কৃত মসিউর রহমান রাঙ্গাকে বাদ দিয়ে দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ করার জন্য জাপার পক্ষ থেকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে গত অধিবেশন চলাকালে চিঠি দেওয়া হলেও সেটির এখনো সুরাহা হয়নি।

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ এখনো থাকায় এবং বাংলাদেশে আসা একজন চীনা নাগরিকের দেহে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিএফ-৭ শনাক্ত হওয়ায় করোনাকালীন আগের অধিবেশনগুলোর মতো এবারের অধিবেশনও পরিচালিত হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। অধিবেশনে যোগ দেবেন এমন সব সংসদ সদস্যকেই ইতিমধ্যে করোনা পরীক্ষা করাতে হয়েছে। সংসদ ভবনে স্থাপিত বুথে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে সংসদ অধিবেশনের সংবাদ সংগ্রহকারী সাংবাদিকদেরও। যাদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, কেবল তারাই সংসদ ভবনে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ থাকা সব সংসদ সদস্যই অধিবেশনের প্রতিটি বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন। অর্থাৎ, মহামারিকালের কয়েকটি অধিবেশনের মতো পালা থাকছে না।

অধিবেশন চলাকালে সংসদ ভবন ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বুধবার (৪ জানুয়ারি) ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অধিবেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে। আদেশে বলা হয়, বুধবার দিনগত রাত ১২টার পর থেকে সংসদ এলাকায় সব ধরনের অস্ত্রশস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন নিষিদ্ধ। 

এ ছাড়া যে কোনও ধরনের সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ ইত্যাদি করা যাবে না।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের অধিবেশনে উপস্থাপনের জন্য ইতিমধ্যে নতুন পাঁচটি বিল জমা হয়েছে। এগুলো হলো—‘ব্যাংক আমানত বিমা (সংশোধন) বিল-২০২৩’, ‘হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) বিল-২০২৩’, ‘মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেরপুর, বিল-২০২৩’, ‘বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (সংশোধন) বিল-২০২৩’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ, বিল-২০২৩’। এছাড়া, ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন’ নামের একটি বিলসহ ১১টি বিল পাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

জানা গেছে, আজ রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেওয়ার পর শুক্র ও শনিবার দুই দিন বিরতি দিয়ে ৮ জানুয়ারি রবিবার সংসদের বৈঠক বসবে। ওইদিন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব আনবেন সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী)। আসন্ন অধিবেশনের পুরো সময় জুড়েই ওই ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করবেন সংসদ সদস্যরা।