‘পেটে লাথি মারা বন্ধ হোক’ পোস্টার নিয়ে শাবিপ্রবির আহত ছাত্র সজলের অবস্থান।

‘পেটে লাথি মারা বন্ধ হোক’ পোস্টার নিয়ে শাবিপ্রবির আহত ছাত্র সজলের অবস্থান।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় : সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলির আঘাতে আহত সাবেক শিক্ষার্থী সজল কুন্ডু তাঁর ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার দায়িত্ব ফিরে পেতে এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা উঠানোর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এ সময় তাঁর হাতে ‘পেটে লাথি মারা বন্ধ হোক’ লেখা সম্বলিত পোস্টার দেখা গেছে।

আজ রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে হাতে লেখা পোস্টার নিয়ে দাঁড়ান। তিনি জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন দাঁড়াবেন।

সজল কুন্ডু বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছিলো। সেখানে প্রশাসন পুলিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর নির্মমভাবে লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড আর ছররা গুলি ছুড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশি এই হামলায় অসংখ্য শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছিলো। এরপর শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে নামেন এবং তখন বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও কোনও দাবি মানা হয় নি।

‘পুলিশের ছোড়া ছররা গুলির প্রায় ৮৩টি স্প্লিন্টার আমার শরীরে বিদ্ধ হয়। আমার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা আমার আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং চাকরির দাবি জানিয়েছিলো। দুইটা দাবির একটাও এখনো মানা হয় নি। আমার চিকিৎসার খরচ বহনের কথা ছিলো, কিন্তু সেটাও পাচ্ছি না। উল্টো আমি যে ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করতাম, সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এখনো বন্ধ করে রেখেছে।

জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির আন্দোলনে গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলায় আহত শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করতে গিয়ে ছররা গুলির আঘাতে আহত হন সজল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনযাপনের জন্য কখনো টিউশনি, কখনো আবাসিক হলে হলে মিষ্টি ও চা বিক্রি করেছেন। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার দায়িত্ব পান এবং গত ২ জানুয়ারি থেকে ক্যাফেটেরিয়া চালু করেন।

গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলার পর থেকে ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ থাকে এবং পরে ২৪ ফেব্রুয়ারিতে আবারও ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা শুরু করেন। তবে গত রমজানের ঈদের ছুটিতে তাঁর কাছ থেকে চাবি নিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। 

সজল বলেন, এরপরে আমাদের কাছে বিভিন্ন কাগজ চাওয়া হলে আমরা সেগুলো রেডি করে নিয়ে গেলে তাঁরা বলেন নতুন দর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। কিন্তু এতোদিন গেলেও তাঁরা কোনও দর বিজ্ঞপ্তি দেয় নি এবং এখনো তাঁরা ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ রেখে আমার পেটে লাথি মারছে। আমি ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্ব ফিরে পেতে চাই। এ সময় ‘সহানুভূতি নয়, অধিকার চাই, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই’ লেখা পোস্টারও দেখা যায়।

ক্যাফেটেরিয়ার বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি পরিচালক অধ্যাপক ড. জহিরুল ইসলামকে ফোন দিলে পরে ফোন ব্যাক করবেন বলে ক্ষুদে বার্তা পাঠান তিনি।

উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে ছাত্রী হলের সমস্যা নিয়ে ছাত্রীরা প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার সঙ্গে কথা বলেন এবং সে সময় প্রভোস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘অসদাচরণ’ করেন এমন অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি উপাচার্য অবরুদ্ধ হলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট, ছররা গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে উদ্ধার করে। পুলিশি এই হামলার প্রায় ৪০ এর অধিক শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁদেরই একজন সজল কুন্ডু।