শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা রোববার : বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা রোববার : বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা রোববার (১৫ মে)। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতির বাণী : শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জানাই মৈত্রীময় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব। মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। মহামতি বুদ্ধ ছিলেন জীবের মঙ্গল কামনায় সত্যসন্ধ। পৃথিবীকে সুখী ও শান্তিপূর্ণ করে গড়ে তোলার জন্য তিনি নিরন্তর প্রয়াস চালান। বুদ্ধের চেতনায় ছিলো দুঃখ জয়ের মাধ্যমে জীবের মুক্তি কামনা। তিনি মানব জীবনে দুঃখ ও দুঃখের কারণ এবং তা নিবারণের উপায় সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেন, যা ‘চতুরার্য সত্য' নামে পরিচিত। চতুরার্য সত্য তত্ত্বে তিনি জীবনে দুঃখ, দুঃখের উৎপত্তি, দুঃখ ভোগের কারণ এবং তা থেকে মুক্তির পথ দেখান। তাঁর মতে ‘নির্বাণ’ লাভের মাধ্যমে মানুষ জীবনের পরমার্থ অর্জন এবং সকল প্রকার দুঃখ থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে পারে। এজন্য তিনি অষ্টমার্গ তথা প্রজ্ঞা, শীল ও সমাধি চর্চার উপদেশ দেন। তিনি স্থান-কাল-পাত্রের ঊর্ধ্বে ওঠে পৃথিবীর সকল জীবের কল্যাণ ও সুখ কামনা করেন। ‘সব্বে সত্তা সুখীতা হোন্তু’ পৃথিবীর সকল প্রাণি সুখী হোক, এ ছিলো বুদ্ধের শাশ্বত দর্শন। মহামতি বুদ্ধ একটি সৌহার্দ ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় আজীবন সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করে গেছেন। ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ বুদ্ধের এই অমিয় বাণী আজও সমাজে শান্তির জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। আজকের এই অশান্ত ও অসহিষ্ণু বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধর্ম-বর্ণ-জাতিতে হানাহানি রোধসহ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহামতি বুদ্ধের দর্শন ও জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। প্রাচীনকাল থেকে বাংলার জনপদের সঙ্গে বৌদ্ধ সভ্যতা ও কৃষ্টি গভীরভাবে মিশে আছে। পাহাড়পুর ও ময়নামতি শালবন বিহার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে এ দেশের সকল ধর্মের মানুষ তাঁদের নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে পালন করে আসছে। এটা আমাদের সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের চর্চা ও বুদ্ধের মহান আদর্শকে ধারণ করে বৌদ্ধ সম্প্রদায় দেশের উন্নয়নে তাঁদের কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন- এ প্রত্যাশা করি। বাংলাদেশে নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার এখন অনেক কমে এসেছে। তবে ভবিষ্যৎ সংক্রমণ বৃদ্ধি রোধে আমাদেরকে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমি আশা করি, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সকলেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উৎসব উদ্‌যাপন করবেন। শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা সবার জন্য বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি ও সমৃদ্ধি। জয় বাংলা। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।’ প্রধানমন্ত্রীর বাণী : ‘মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম, মৃত্যু ও বোধিজ্ঞান লাভের স্মৃতিবিজড়িত শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আমি বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। মহামতি গৌতম বুদ্ধ আজীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিলো তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। বুদ্ধ সত্য ও সুন্দরের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবজগতকে আলোকিত করতে কাজ করে গেছেন। মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। হাজার বছর ধরে এ ভূখণ্ডে সব ধর্মের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করে আসছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে সবার সমঅধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এই দেশে ধর্ম যাঁর যাঁর, উৎসব সবার। আমাদের সব ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবগুলো অত্যন্ত আনন্দ ও প্রীতির মাধ্যমে উদ্‌যাপন করে থাকে। আগামীতে বাংলাদেশের সম্প্রীতির চর্চা ও বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে আমাদের সবাইকে উদার হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা সম্প্রীতির বার্তাবরণে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে চাই। আমি আশা করি, গৌতম বুদ্ধের আদর্শ ধারণ ও লালন করে সকলে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মানুষের জীবনে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল বয়ে আনুক- এ কামনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।’