সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিলের রায় স্থগিত।
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেওয়া-সংক্রান্ত সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারা বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে আবেদনের শুনানি আগামী ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার (পহেলা সেপ্টেম্বর) এ আদেশ দেন।
আইনের ধারাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট ধারাটি সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। যা গতকাল বুধবার চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। চেম্বার বিচারপতি আবেদনটি আজ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।
আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্টের রায় ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলা হয়েছে।
স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদনের বিষয়ে গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, সরকারি কর্মচারীদের অযথা হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা করা হয়। মামলার পর তাঁকে যদি গ্রেপ্তার করা হয়, পরে তিনি যদি মামলায় খালাস পান, তাহলে তার মধ্যে এক ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই ভোগান্তি নিরসন ও সরকারি কাজের সুবিধার জন্য আইনটি করা হয়। এসব দিক সামনে রেখে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদনটি করা হয়।’
২০১৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরি আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে একই বছরের ১ অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হয়।
আইনটির ৪১ (১) ধারার ভাষ্য, কোনও সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।
আইনের ধারাটি সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থী উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে তিন আইনজীবী ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারা কেনো বাতিল এবং সংবিধানের ২৬, ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন। ফলে ফৌজদারি অভিযোগে মামলা হলে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে না বলে সেদিন জানিয়েছিলেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।