গ্রামীণ টেলিকম : ৬ অ্যাকাউন্টে সরানো হয় ২৬ কোটি টাকা।

গ্রামীণ টেলিকম : ৬ অ্যাকাউন্টে সরানো হয় ২৬ কোটি টাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের টাকা থেকে ২৬ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, আইনজীবী ইউসুফ আলী, আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও ইউনিয়নের অপর নেতা মো. মাইনুল ইসলামের অ্যাকাউন্টে এ পরিমাণ টাকা ট্রান্সফার করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

দুদকের তথ্যমতে, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, তাঁদের পাওনা ৩৬৪ কোটি ১৭ লাখ ৯ হাজার ১৪৬ টাকা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন, কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ করাসহ গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ পায় দুদক।

কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ৩১ জুলাই দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। দলের অপর সদস্যরা হলেন- দুদকের সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও মোহাম্মদ নুর আলম সিদ্দিকী। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) অভিযোগের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদে টাকা লোপাটের বিষয়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে দুদক সূত্রে জানিয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিক-কর্মচারী ও গ্রামীণ টেলিকমের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ ২০১০ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত লভ্যাংশ হিসেবে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা একটি নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে। এসব টাকা গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীরাই পাবেন। দেখা গেছে, এসব টাকা থেকে ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেওয়া হয়। ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সিগনেটরি হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্র বলছে, গ্রামীণ টেলিকম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেওয়ার এসব টাকা কয়েকজনের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়। লভ্যাংশের ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকার মধ্যে ১ কোটি টাকা পাঠানো হয় আইনজীবী ইউসুফ আলীর আইনি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। বাকি টাকার মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও ইউনিয়নের অপর নেতা মো. মাইনুল ইসলাম- প্রতিজন পেয়েছেন তিন কোটি টাকা করে। 

এ ছাড়া ইউসুফ আলী নতুনভাবে ব্যাংক হিসাব খুলে সেখানে ট্রান্সফার করেছেন ৯ কোটি টাকা এবং তিনি ও আইনজীবী জাফরুল হাসান চৌধুরী যৌথভাবে ব্যাংক হিসাব খুলে সেখানে ট্রান্সফার করেছেন ৬ কোটি টাকা। জাফরুল হাসান চৌধুরী কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্যানেল আইনজীবী।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, তাঁদের পাওনা ৩৬৪ কোটি ১৭ লাখ ৯ হাজার ১৪৬ টাকা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা, তাঁদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎসহ গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে।

অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে দুদকে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। এর মধ্যে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী, আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।