বাংলাদেশের বন্ধু ও ভারতের সংস্কৃতির ধারক জর্জ হ্যারিসনের মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো ২৯ নভেম্বর।

বাংলাদেশের বন্ধু ও ভারতের সংস্কৃতির ধারক জর্জ হ্যারিসনের মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো ২৯ নভেম্বর।

ডন প্রতিবেদন : জগৎবিখ্যাত সঙ্গিতশিল্পী জর্জ হ্যারিসনের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো গতকাল সোমবার (২৯ নভেম্বর)। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গানের মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষে গোটা বিশ্বকে জাগ্রত করেছিলেন। সাড়া জাগানো ‘দ্য বিটলস’ ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট এবং অন্যতম কণ্ঠশিল্পী ছিলেন জর্জ হ্যারিসন। তিনি পৃথিবীর সেরা ১শ গিটারিস্টেরমধ্যে অন্যতম। আর তাঁর অবস্থান ১১ নম্বর। ১৯৪৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন জর্জ হ্যারিসন। জর্জ হ্যারিসনের বাড়ি ব্রিটেনের ওয়েভারট্রি অঞ্চলে। হ্যারিসনের এই পুরনো বাড়ি দেখতে সেখানে প্রচুর পর্যটক ভিড় জমাতেন। বাবার এক বন্ধুর কাছে জর্জের প্রথম গিটারের হাতেখড়ি। ১৩ বছর বয়সে প্রথম গিটার হাতে পান তিনি। হাইস্কুলে পড়ার সময়ই জর্জ ঠিক করে ফেলেন তিনি সঙ্গিত নিয়েই থাকবেন। রক অ্যান্ড রোল-ই হবে তাঁর জীবন। ১৯৫৬ সালে বন্ধু ম্যাকার্টনিরসঙ্গে লেননের প্রথম ব্যান্ড ‘কোয়ারিমেন’-এ যোগ দেন তিনি। ১৯৬০ সালে ‘কোয়ারিমেন’ই নাম বদলে হয় ‘বিটলস’৷ ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসন। ম্যাকার্টনি আর লেনন গায়ক। জর্জও অবশ্য বেশ কয়েকটি গান গেয়েছেন বিটলসে। সারা পৃথিবীতেই শো করেছে বিটলস। বিটলসে থাকাকালীন জর্জ বেশকিছু গানও লিখেছিলেন। কিন্তু তাঁর অভিযোগ ছিলো, তাঁর লেখা অধিকাংশ সময়েই বাতিল করে দিতেন লেনন এবং ম্যাকার্টনি। তবুও তাঁর লেখা সাড়া জাগিয়েছিলো৷ ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে হ্যারিসনের ঝোঁক ছিলো চিরকালই। ১৯৬৬ সালে বিটলস ভারতে আসে। মহাঋষি মহেশ যোগীর কাছে ধ্যান শিখতে যান সকলেই। ব্যান্ডের বাকি সদস্যরা দ্রুত আগ্রহ হারালেও হ্যারিসন বুঁদ হয়ে যান ধ্যানে। পরবর্তী জীবনে ‘হরে কৃষ্ণ’ আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন হ্যারিসন। ব্যান্ডের ওপর রাগ করে ১৯৬৮ সালে প্রথম সোলো অ্যালবাম বের করেন জর্জ, ‘ওয়ান্ডারওয়াল মিউজিক’। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসেরসঙ্গে জড়িয়ে আছে জর্জ হ্যারিসনের নাম। ১৯৭১ সালে রবিশংকরেরসঙ্গে জর্জ আয়োজন করেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিকামী বাঙালিদের বিরুদ্ধে যে গণহত্যা চালাচ্ছিলো, তা বিশ্ববাসীকে জানাতে এবং ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে ওই কনসার্টের আয়োজন হয়েছিলো। বব ডিলান, রিঙ্গো স্টার, রবিশংকর এবং এরিক ক্ল্যাপটন সকলেই অংশ নিয়েছিলেন ওই কনসার্টে। ১৯৯৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডে ফ্রাইয়ার পার্কে তাঁর বাড়িতে ঢুকে মানসিকভাবে অসুস্থ এক ব্যক্তি জর্জ হ্যারিসন ও তার স্ত্রী অলিভিয়ার ওপর ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে। এতে হ্যারিসনের ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে একসময় তাঁর ফুসফুসে ক্যানসারও ধরা পড়ে। অবশেষে ২০০১ সালের ২৯ নভেম্বর মাত্র ৫৮ বছর বয়ে মারা যান এই কিংবদন্তি। জর্জ হ্যারিসনের শেষ বিদায়টা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেই; ক্যালিফোর্নিয়ার লস এ্যাঞ্জেলেসে। বেভারলি হিলস এর হেদার রোডে পল ম্যাককার্থির বাড়িতে মারা যান তিনি। জীবনে ভারতীয় সঙ্গিত ও সংস্কৃতির প্রতি ভীষণভাবে আকৃৃষ্ট হয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন। এ কারণে হিন্দু ধর্ম অনুসারে তাঁর দেহাবশেষ দাহ করা হয়। যাঁর অংশবিশেষ পরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো ভারতের গঙ্গা ও যমুনা নদীতে।