শিক্ষকের গলায় জুতার মালা : প্রতিবেদন দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি।

শিক্ষকের গলায় জুতার মালা : প্রতিবেদন দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা দেওয়ার ঘটনায় গঠিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত শেষে মঙ্গলবার (৫ জুলাই) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে ওই প্রতিবেদন জমা দেন কমিটি সদস্যরা।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শরীফ আতিকুজ্জামান বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, তদন্তকালে নড়াইলের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। সেই ভিত্তিতেই তাঁরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, এ ঘটনায় শিক্ষক জড়িত থাকলে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা দেওয়ার ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা তৈরি হলে গত ২৬ জুন ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে খুলনার সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজের অধ্যক্ষ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক শরীফ আতিকুজ্জামানকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন দপ্তরের পরিচালক এ এস এম রফিকুল আকবর এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক আ স ম আবদুল হক।

কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিলো। সে মোতাবেক গত ২৯ জুন সরেজমিনে তদন্ত করে কমিটি।

এদিকে, শিক্ষককের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার নূর-নবীকে জিজ্ঞাসাবোদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ৩ দিনের রিমান্ডে থাকা ৪ আসামির জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

গত ১৮ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করা হয়। এর আগের দিন ১৭ জুন ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুকে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে প্রণাম জানিয়ে ছবিসহ একটি পোস্ট দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজ শিক্ষক, ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীকে তাঁদের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যেতে চাইলে উত্তেজিত ছাত্র ও বহিরাগতরা বাধা দেন। তখন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়। বিকেল চারটার দিকে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং ওই শিক্ষার্থীকে কলেজের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে বের করা হয়। নিচতলার কলাপসিবল গেটের সামনে আনার পর তাঁদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় এসপি ও ডিসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। 

শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় এর আগেও একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। শনিবার (২ জুলাই) রাত সাড়ে আটটার দিকে জেলা প্রশাসকের নিকট ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী।