আবেদ খান’র কলাম : যত্নে রাখি ঢাকি

আবেদ খান’র কলাম : যত্নে রাখি ঢাকি

উপ-সম্পাদকীয় মত, বাঙলার কাগজ : আমার কৈশোরের প্রথম পর্যায়ে একজন হাসিখুশি মানুষকে দেখেছিলাম। আমি সে সময় বাবার হাত ধরে লালবাগের ঐতিহাসিক দৈনিক আজাদ পত্রিকা অফিসে যেতাম। আমার মায়ের চাচা মওলানা আকরম খান দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁকে আমি বড়ো নানা বলে ডাকতাম। আমার পিতা সেখানকার জেনারেল ম্যানেজার। বিকেলে তিনি যখন অফিসে যেতেন, আমাকে নিয়ে যেতেন তাঁর সঙ্গে। সেখানে আমার মামাতো ভাইবোনদের সঙ্গে খেলাধুলা, হৈহুল্লোড়, খুনসুটি নিয়ে মেতে থাকতাম। মাঝেমধ্যে বড় নানার বিশাল লাইব্রেরির ভেতর ঢুকে অনেক বইপত্র দেখতাম, নাড়াচাড়া করতাম। কিছু কিছু বই নিয়ে পড়তামও। তখন দৈনিক আজাদের বিশাল মাঠে ইজি চেয়ারে বসে থাকা বড়ো নানার কাছে বসে খেলাধুলা করতাম, তাঁর কাছে পুরোনো দিনের নানা রকমের গল্প শুনতাম। সে সময় একজন ভদ্রলোককে দেখতাম প্রায়শই আমার নানার কাছে আসতেন। আমার মনে হতো সেই ভদ্রলোক মওলানা সাহেবের যথেষ্ট স্নেহধন্য। বিভিন্ন প্রসঙ্গে নানাভাবে তাঁরা দুজনে কথা বলতেন, গল্প করতেন। অল্প কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন আবার অন্যদিকে চলে যেতেন। কখনো কখনো দেখতাম দৈনিক আজাদ অফিসের লম্বা টানা বারান্দায় তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে মাঝেমধ্যেই আদর করতেন, কথা বলতেন।

আমি তখনো জানি না কোন বিভাগে তিনি কাজ করতেন। কিন্তু তাঁর অত্যন্ত সদাহাস্যময় মুখটি তখনই আমাকে খুব আকর্ষণ করতো। তাঁর আরও একটা ব্যাপার আমাকে খুবই আকর্ষণ করতো, সেটা হচ্ছে আমি শুনেছি যে অনেক সময় তিনি অভ্রান্ত ভবিষ্যৎ গণনা করতে পারতেন। তখনও আমার হাত দেখানোর বয়স হয় নি। আমার সেই বয়সে দেখতে পেতাম বড়ো নানার অত্যন্ত কাছের মানুষ একজন আমাদের তোফাজ্জল ভাই যাঁর কথা বলছি। বড়ো নানা কিছুটা হস্তরেখা বিষয় নিয়ে চর্চা করতেন বোধহয়। তাঁর কাছে এই বিষয়ক নানাবিধ বইপত্রও ছিলো। হয়তো তোফাজ্জল সাহেবের কাছ থেকে এই বিষয়টি সম্বন্ধেই কিছু কথা শুনতেন, আলোচনা করতেন। 

তোফাজ্জল হোসেনের নিখুঁতভাবে ভবিষ্যৎ বলে দেওয়ার এই ক্ষমতার কথা অন্যদের কাছে শুনে আমার কাছে অসম্ভব রকমের অতিমানবীয় একটা ব্যাপার মনে হতো। অব্যর্থভাবে ফলে যাওয়া তাঁর ভবিষ্যৎ বাণীর এই অতিপ্রাকৃত গুণের কথা অনেকেই জানতেন। পরবর্তীতে তাঁর চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর যখন আমিও বড়ো হয়েছি, তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় দেখা হয়েছে, তাঁর বাড়িতেও গিয়েছি। তখন একদিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আচ্ছা আপনি ভবিষ্যৎ বলেন কী করে? তিনি কেবল স্মিত হেসে বলেছিলেন, এখানে কোনোক্রমেই অলৌকিক কোনও ব্যাপার নেই। মানুষের চেহারার ভেতর দিয়েই তাঁর মনের ভেতরটা, তাঁর কর্মকাণ্ড স্পষ্টভাবে বুঝতে পারা যায়। এভাবেই আমি ভবিতব্য অনুমান করি, বুঝতে পারি। 

একটা পুরোনো কথা মনে পড়লো। যে কথা আমার স্মৃতির সঙ্গে উজ্জ্বল হয়ে আছে। তখন আমি ভোরের কাগজে সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেছি। ভোরের কাগজে একদিন একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। সর্বস্তরের গণ্যমান্যরা এলেন সেই অনুষ্ঠানে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আমার পেশাজীবনের অন্যতম কাণ্ডারি প্রয়াত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ছিলেন তোফাজ্জল ভাই, ছিলেন সরদার ফজলুল করিম, আবুল মাল আব্দুল মুহিতসহ অনেক গণ্যমান্য মানুষ। সেদিনের সেই দিনটি পুরোনো বন্ধুদের নিয়ে একটা দারুণ আড্ডার ভেতর দিয়ে অতিবাহিত হয়। সেই সময় ভাষাসৈনিকদের মধ্যে যাঁরা জীবিত ছিলেন, অধিকাংশই সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। সবাই যেনো বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সেই দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলেন। পুরোনো সেই দিন ও গল্পগুলোর মধ্যে তোফাজ্জল সাহেব মেতে উঠেছিলেন সেই স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে। সে এক অনুপম দৃশ্য। সেই দৃশ্য আজও আমাকে তাঁদের কাছে পৌঁছে দেয়।

তোফাজ্জল হোসেন কেবল সাংবাদিক, কবি, গীতিকার ও লেখকই নয়, মহান ভাষা আন্দোলনের একজন লড়াকু রাজপথের সৈনিকও। বাংলা ভাষার জন্যে আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর দৃপ্ত পদচারণা বাঙালির ইতিহাস নির্মাণে অবিস্মরণীয় ভূমিকার কথা ইতিহাস সাক্ষ্য বহন করে। সমগ্র জীবনভর বাঙালি জাতিসত্তা, বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা নির্মাণ-বিনির্মাণের সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তাঁর কবিতা, গান, গবেষণা, লেখালেখির পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবেই যুক্ত থেকেছেন। পাকিস্তান আমলে ষাটের দশকে সামরিক শাসনের ভূত যখন চেপে বসলো, তখন বাঙালির সাংস্কৃতিক শক্তিতে আবারও জেগে ওঠার পেছনে যে সমস্ত কারিগরেরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে তোফাজ্জল সাহেব অন্যতম প্রধান চরিত্র। পরবর্তীতেও তাঁর সৃজনশীল কর্মের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের বিকাশে তিনি নিরলস কাজ করে গেছেন।

ছাত্রজীবন থেকে প্রগতিশীল রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তোফাজ্জল হোসেন। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ সংগ্রামের সময়গুলোতে চারিদিকে ছিলো নিষেধের বেড়াজাল। তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ভাষা সংগ্রামে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। তোফাজ্জল  সাহেব মানুষ হিসেবে অত্যন্ত প্রচারবিমুখ ছিলেন, একজন নিভৃতচারী সমাজ চিন্তক সৃজনশীল মানুষ ছিলেন আবার একইসঙ্গে তাঁর সরব উপস্থিতি ছিলো দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সমস্ত সংগ্রামে। 

১৯৩৫ সালের ৯ অক্টোবর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করা তোফাজ্জল হোসেন এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে এক সময় তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। আজীবন কখনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেছেন, আবার কখনো সরকারি ঊর্ধ্বতন পদে চাকরি করেছেন। বাংলাদেশের তথ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান তথ্য কর্মকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তাঁর দায়িত্ব পালন করে গেছেন দারুণভাবে। পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে সাংস্কৃতিক আলোন্দনসহ নানামুখী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকেছেন। তিনি মুকুল ফৌজ, আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, শিশু কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি, সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট এবং ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ড, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড, জুরী বোর্ড ও স্ক্রিপ্ট কমিটিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনসহ রাষ্ট্রের নানাবিধ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন অত্যন্ত বলিষ্ঠচিত্তে। একজন সাংবাদিক হিসেবে তাঁর দায় থেকেও গণমাধ্যমের উন্নয়নে কাজ করেছেন। সংবাদপত্রের বেতন বোর্ডের দায়িত্বে থাকাকালীন গণমাধ্যমে উন্নয়ন যোগাযোগ সেল প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।

পেশাগত জীবনের এতো সমস্ত কর্মযজ্ঞের মধ্যে থেকেও সৃজনশীল কর্মের সঙ্গেও নিবিষ্টভাবে জড়িয়ে ছিলেন এই চিন্তামগ্ন সাধক। রচনা করেছেন অসাধারণ সব কবিতা, গান; লিখেছেন একাধিক গবেষণাধর্মী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধগ্রন্থ, অনুবাদগ্রন্থ। বিশ্বময় শিশুদের বঞ্চনা থেকে রক্ষা ও তাঁদের সুরক্ষিত জীবনের পথনির্দেশনা দিয়েছেন তাঁর গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ সংকলন রচনায়।

প্রতি মুহূর্তে যে তিনি দেশকে অনুভব করেছেন, মানুষের কথা ভেবেছেন; দেশমাতৃকার প্রতি যে গভীর ও নিবিড় মমত্ববোধ ও ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করেছেন তাঁর গানে, কবিতায় তা এক কথায় অনবদ্য ও বর্ণনাতীত। তাঁর হৃদয়ের প্রতিটি পরতে এই দেশটিরই মানচিত্র এঁকেছিলেন এবং প্রতিটি রক্ত কনায়, প্রতি নিশ্বাসে বিশ্বাস করতেন সোনার বাংলা তথা একটি সুন্দর দেশ গড়ে তোলার স্বপ্নকে। বাংলা ভাষাকে যেমন সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রেখেছেন, একইসঙ্গে বাঙালি জাতীয়তাবোধ তৈরিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন তাঁর সমস্ত সৃষ্টিযজ্ঞের ভেতরে। সেই স্বপ্নের কথা, সেই ভালোবাসার কথা, দেশপ্রেমের কথা আমরা জানতে পারি, তাঁর কবিতা গানের ছত্রে ছত্রে। তিনি লিখেছেন-

“একটি দেশের ভালোবাসা মোর হৃদয়-পরতে মাখা
একটি দেশের মানচিত্রই আমার হৃদয়ে আঁকা।
এ দেশ আমার বিশ্বভুবন
সোনার বাংলাদেশ
রক্ত কণায় সদা জাগ্রত
মূর্ত অনিঃশেষ।”

তোফাজ্জল হোসেনের প্রতিটি রক্ত কণায় ছিলো প্রতিবাদ। শোষণ-বঞ্চনা-বৈষম্য আর পরাধীনতার বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ ছিলো সরব ও উচ্চকিত। পাকিস্তানি হায়েনারা যখন সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করলো, তখন তিনি এক মুহূর্তও বিলম্ব না করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে হলেও উর্দু হটানোর প্রতিবাদে সংগ্রামে রাজপথে নেমে পড়লেন। সেই চেতনায়ই উৎসারিত হয়ে এক সময় তিনি তাঁর ঐতিহাসিক গানটির জন্ম দিলেন :
“রক্ত শপথে আমরা আজিকে তোমারে স্মরণ করি,
একুশে ফেব্রুয়ারি।
দৃঢ় দুই হাতে রক্ত পতাকা ঊর্ধ্বে তুলিয়া ধরি
একুশে ফেব্রুয়ারি
তোমারে স্মরণ করি।”

আপাদমস্তক দেশমাতৃকার কল্যাণের চেতনায় উদ্বুদ্ধ তোফাজ্জল হোসেন ছিলেন পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ফেলার প্রত্যয়ে কঠোরভাবে প্রত্যয়ী। একটি জাতির যে কোনও কল্যাণকর উন্নতির শিখরে পৌঁছানোর জন্যে যে স্বাধীনতাই প্রধানতম পূর্বশর্ত এবং মহামূল্যবান, সে বিষয়ে তিনি লিখেছেন তাঁর গীতিকবিতায়। আত্মত্যাগ ও আত্ম-উৎসর্গের মনোবৃত্তিই যে সেই স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের পূর্বশর্ত তা-ও তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন। 

তোফাজ্জল হোসেন সেই সাহসী কণ্ঠ, যিনি দেশের জন্যে জীবন দিতেও একটুও কুণ্ঠিত নয় এবং মৃত্যুভয় কখনোই তাঁকে বিচলিত করে নি। কেননা স্বাধীনচেতা এই কবি মনেপ্রাণে যা বিশ্বাস করতেন এবং তা দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণও করেছেন-

“স্বাধীনতা এক রক্ত গোলাপ ফুল
বিশ্বে কিছুই নয় তার সমতুল।”

তিনি বিশ্বসাহিত্যের বিখ্যাত ও নন্দিত কবিদের কবিতা অনুবাদ করেছেন; যা নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদে পরিণত হয়েছে। তাঁর অনূদিত কবিতাগ্রন্থে জায়গা পাওয়া সেইসব কবিতাগুলোর সূচিপত্রে চোখ রাখলেই তোফাজ্জল সাহেবের বিশ্বমানবতাবাদী ও আশাবাদী মনোবৃত্তি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। তিনি কেবল জাতীয়তাবাদের কবি নন, তিনি বিশ্বমানবতাবাদী চিন্তকও। সমগ্র বিশ্বের তথা বিশ্বমানবগোষ্ঠীর সমাজকে একই নদীধারার ধাবমান গতি সাগরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার অনিবার্যতার প্রত্যাশাই তিনি করেছেন। অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বকে একটি সমাজ হিসেবেই দেখতে চেয়েছেন। তাই তিনি অনুবাদ করলেন স্টিফেন শিপাচেভের বিখ্যাত কবিতা ‘মানবসমাজ’।

“মানবসমাজ আমার মতে জাতিগোষ্ঠীর এক নদী
আমি আমার দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি
ঠিক যেন সাগরের দিকে বয়ে চলেছে
এবং আমি কখনও বিশ্বাস করব না
এত শক্তিশালী যে স্রোতধারা
আমার মামুলি গানের মতো তা হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে।”

১৯৫৩ সালে কবি সংকলক হাসান হাফিজুর রহমান ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ শিরোনামের যে ঐতিহাসিক সংকলনগ্রন্থ সম্পাদনা করেছিলেন, সেই সংকলন গ্রন্থে যে দুটি গীতিকবিতা গৃহীত হয়েছিলো, তার প্রথমটি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর আর দ্বিতীয় গানটির স্রষ্টা ছিলেন অসাধারণ এই মানুষটি। তাঁর গানটির শিরোনাম ছিলো “রক্ত শপথে আমরা আজিকে তোমারে স্মরণ করি”।

সত্যিকার অর্থে ভাষাসৈনিক, কবি তোফাজ্জল হোসেন ছিলেন এক নিবিড় নিবিষ্ট মননশীল মানুষ। একইসঙ্গে নানামুখী কর্মযজ্ঞের ভেতরে থেকেও তিনি যে এক বিশাল সৃষ্টিশীল নিবিষ্টতায় কীভাবে নিমগ্ন হতে পেরেছিলেন এবং সমস্ত কিছুর মধ্যে এক অসাধারণ সমন্বয় সাধন করেছেন, সেটা আমার কাছে সত্যিই বিস্ময়কর। ইতিহাস তাঁকে মনে রেখেছে, মনে রাখবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। ভাষা আন্দোলনে অনবদ্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার দেরি করে হলেও ২০১৩ সালে তাঁকে ‘একুশে পদক’ প্রদান করে যে সম্মান ও স্বীকৃতি প্রদান করেছে, সেটিকে যথার্থ বলেই মনে করি।

লেখক : সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।