চরমোনাই পীরের হুঙ্কার প্রসঙ্গ : ঠোঁট ফাটলেই যদি সরকারের পতন হয়ে যেতো, তাহলে কবেই বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় চলে যেতো

চরমোনাই পীরের হুঙ্কার প্রসঙ্গ : ঠোঁট ফাটলেই যদি সরকারের পতন হয়ে যেতো, তাহলে কবেই বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় চলে যেতো

কালাম আঝাদ’র কলাম : হা হা হা, চরমোনাইয়ের ‘পীর’ অন্যায় করে মার খেয়ে ঠোঁট ফাটিয়ে নির্বাচন বয়কট করে মেয়র হতে না পেরে এখন সরকারের বিরুদ্ধে নেমেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তার আস্ফালন দেখে মনে হয়, অন্যায়ের জন্য, তাকে শিগগিরই জেলে যাওয়া লাগতে পারে। যে ব্যক্তি মার খাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে মেনে নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন, সেই ব্যক্তি কার না কার হাতে মার খেয়ে এখন সেই মারের দোষ দিচ্ছেন সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে। অথচ বাংলাদেশের নির্বাচনে ছোটখাটো দু-একটি ঘটনা ঘটেই থাকে। যেখানে প্রভাব বিস্তার করে থাকেন সংশ্লিষ্ট দলের নেতাকর্মীরা। তো, উনি যখন মার খেয়েছেন, তখন মার দেওয়া ব্যক্তিকে তার সঙ্গে থাকা লোকজন মারতে পারলো না কেনো? (যদিও মারামারি ভালো নয়, কিন্তু প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে এমনটি হয়ে থাকে বলে বলছি) নাকি বহিরাগত ছাড়া উনার চলে না, মাদরাসার কোমলমতি শিক্ষার্থী এবং যুবকদের ছাড়া উনার চলে না? আর উনার যে দলের নেতাকর্মী দিয়ে বহিরাগত ছাড়া চলে না, সেটিও নির্বাচনের দিন বিকেল বেলায়ই আমরা দেখেছি।

আর তথাকথিত পীর সাহেব এখন তার ‘অবুঝ’ নেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়ে নিজের মার খাওয়ার বদলা নিতে সরকার পতন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। উনি কি জানেন না- রাজনীতি করতে হলে কত মার খেতে হয়, পুলিশের পিটুনি খেতে হয়, রাস্তায় বসে থাকতে হয়। নাকি উনি মনে করেছেন, রাজনীতির মাঠেও সবাই তাকে হুজুর হুজুর বলে চেয়ার ছেড়ে দেবে। বাংলাদেশের মতো জায়গায় রাজনীতি করা কি এতোই সোজা? আর জেল না খেটে, নেতা না হয়ে কীভাবে উনি মেয়র আর এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন? সেটাই তো আমার বুঝে আসে না। উনি তো উনার মার খাওয়ার বিচার আগে দাবি করবেন এবং বিচার হয় কি-না, সেটা দেখবেন, তা না উনি সরকার ফেলে দেবেন! একটু ঠোঁট ফাটলেই যদি সরকার ফেলে দেওয়া যেতো, তাহলে বিএনপি আর জামায়াত অনেক আগেই ক্ষমতায় চলে যেতো। আর উনার দল নিশ্চয় বিএনপির চেয়ে বড় নয়। আরেকটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মাদরাসার এতিম মাসুম বাচ্চাদের নিয়ে বা যুবকদের নিয়ে রাজনীতি করার দিন শেষ। ধর্ম বিক্রি করে উনি তো আর জামায়াতের চেয়ে বেশি রাজনীতি করতে পারবেন না। আর উনি কি দেখছেন না, জামায়াতের বর্তমানে অবস্থা কেমন? সুতরাং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন শেষ। এখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের চেয়েও অনেক কঠোর। কারণ তাঁরা জনগণের জানমাল রক্ষায় বদ্ধ পরিকর। আর এ ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিও রয়েছে। কারণ আমরা দেখেছি, অনেককে আগুনে পুড়ে মরতে, অনেক কিছু ধ্বংস হয়ে যেতে, কিন্তু বাংলাদেশে এগুলো আর হতে দেওয়া হবে না। আর কেউ যদি তা করার চেষ্টাও করে, তবে তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার কার্যকর করা হবে। উনাকে বুঝতে হবে, মামুনুল হক রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে পরে নিজেই ফেঁসে গিয়েছেন, তো হেফাজতে ইসলাম কি করতে পেরেছে? নাকি হেফাজতের চেয়ে উনার ইসলামী আন্দোলন বড় কোনও ‘শক্তি’।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলবো, মানুষের ধর্মকর্মের জায়গায় রাজনীতির স্থান হতে পারে না। কারণ ধর্ম আলাদা, রাজনীতি আলাদা। আমাদের ইসলাম ধর্মেই আছে, মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম। তাহলে আমরা কীভাবে আমাদের জাতীয় মসজিদের ভেতর বসে দুনিয়াবী তথা রাজনীতির কথা বলি কিংবা জাতীয় মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিই? এটা কি রাজনীতির জায়গা? এটা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের জায়গা। এখানে মানুষ ধর্মকর্ম করবে, রাজনীতি নয়। আর আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু উনার দলের গঠনতন্ত্রে নেই বলেই তো নির্বাচন কমিশন তার দলের অনুমতি দিয়েছে, এখন কেনো তাহলে রাজনীতিতে ধর্মকে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে, অচিরেই নির্দেশনা জারি করতে হবে- স্কুল, কলেজ বা মাদরাসার কোনও শিক্ষার্থী বা কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কোনও দল জাতীয়ভাবে তার রাজনীতির উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করতে পারবে না।

আর ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদেরকেও বুঝতে হবে, চরমোনাইয়ের পীর নিজের ঠোঁট ফেটে যাওয়ার পর যেভাবে সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন এবং নির্বাচন কমিশনকে বয়কট তথা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাতে উনি যদি কোনও দিন নির্বাচিত হতেও পারেন, তবে উনার স্বার্থটাই দেখবেন। এর প্রধান উদাহরণ হলো, ওইদিনের সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে তিনি ছাড়া তার দলের একজন কর্মী তার চেয়ে বেশি আহত হয়েছিলেন, অথচ তিনি কোথাও ওই কর্মীর কথা বলেন নি।

যাঁরা বুঝেন, তাঁরা অল্পতেই বুঝেন। সুতরাং আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশে আন্দোলন-সংগ্রাম হলেও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হবে এবং আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, কখনো কোনও সভা-সমাবেশ করতে গেলে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে।

বাবা আর দাদার গল্প বিক্রি করে চলা চরমোনাইয়ের পীরকে শুধু আমি একটি কথাই বলবো, একটি দেশের সরকারপ্রধান কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দেওয়া যায় না, তার জন্য প্রায় সব দেশেই আইন প্রচলিত আছে। আমাদের দেশেও তা বিদ্যমান। এ অবস্থায় কথায় কথায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলা চরমোনাইয়ের পীরকে নিয়ে সন্দেহ জন্ম নিয়েছে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলা চালাতেও দ্বিধাবোধ করবেন না- যা তার কথা থেকেই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। 

আরও একটি কথা না বললেই নয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার চরমোনাইয়ের পীরের বক্তব্য অনুযায়ী ইন্তেকালের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছেন। কারণ চরমোনাইয়ের পীর নিজেই বলেছেন, উনার শরীর থেকে যখন রক্ত বের হয়েছে, তখন তার শরীরের সমস্ত রক্ত জমিনে ঢেলে তিনি শহীদ হবেন এবং সরকারের পতন ঘটাবেন। এমন দৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য ফৌজদারী অপরাদের শামিল এবং তার কথায় জঙ্গিবাদের আঁচ পাওয়া যায়। কারণ জঙ্গিরাই একমাত্র বলে থাকে, ‘মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী।’

এ অবস্থায় ঠোঁট ফাটার পর দুনিয়াটা উল্টে দেবেন বলে যেই পীর সাহেব হুমকি দিচ্ছেন, পারলে উনি উনার গায়েবী শক্তিতে কিছু করে দেখাক। অন্যথায় তার কোনও নেতাকর্মীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোনও সম্পদের কোনও ক্ষতি হলে বা জানমালের কোনও ক্ষতি হলে নির্দেশদাতা হিসেবে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোনও মন্তব্য করার আগে চরমোনাইয়ের পীরকে আমি দশবার ভেবে দেখতে বলবো। কারণ প্রধানমন্ত্রী উনাকে ঘুষি মেরে উনার ঠোঁট ফাটান নাই।

আর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ চাওয়া এবং তাঁর বিরুদ্ধে অমূলক বক্তব্য দেওয়াও কোনোভাবেই সমীচীন নয়।

এই দেশের মানুষ কখনোই উগ্রবাদকে সমর্থন করে না, করবেও না। আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চয় উগ্রবাদ করলে ছেড়ে দেবে না।

লেখক : কালাম আঝাদ, সম্পাদক এবং প্রকাশক; বাঙলার কাগজ।