জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সব সময় কঠোর থাকতে হবে : কালাম আঝাদ

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সব সময় কঠোর থাকতে হবে : কালাম আঝাদ

সম্পাদকীয় মত, বাঙলার কাগজ : আর মাত্র ১০ দিন পরেই আমাদের প্রাণের বর্ষবরণ উৎসব পহেলা বৈশাখ। এর আগেরদিন চৈত্র সংক্রান্তি। অর্থাৎ বাঙালিদের সবচেয়ে বড় প্রাণের উৎসব বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ মাত্র দেড় সপ্তাহ পরেই। আমাদের মনে রাখতে হবে, ২০০১ সালে ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করেছিলো জঙ্গিরা। আর চৈত্র সংক্রান্তি এবং বর্ষবরণ সবচেয়ে উৎসবমুখরভাবে এবং বড় পরিসরে হয় পাহাড়ি এলাকায়। তাঁরা চৈত্র সংক্রান্তিটাও খুব ধুমধামের সহিত করেন। আর কেন্দ্রীয়ভাবে রমনার বটমূল এবং টিএসসি থেকে শোভাযাত্রা তো হয়ই। মোদ্দাকথা, সকল ধর্ম-বর্ণ ভুলে বাঙালি সবচেয়ে বড় যে উৎসবটি উদ্‌যাপন করে থাকে, সেটি হলো বর্ষবরণ।

আমি এর আগে বলেছিলাম, বিভিন্ন উৎসবের আগে জঙ্গিরা তৎপরতা দেখাতে চায়। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, বাংলা ও ইংরেজি বর্ষবরণ, বইমেলা এবং পূজা-পার্বণ অন্যতম। তাই আমাদের এসব অনুষ্ঠানের আগে বা মাসের আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে পুরো বছরজুড়ে, তবে জানুয়ারি (ইংরেজি বর্ষবরণ, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন), ফেব্রুয়ারি (বইমেলা এবং একুশে ফেব্রুয়ারি), মার্চ (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন এবং স্বাধীনতা দিবস), এপ্রিল (চৈত্র সংক্রান্তি ও বর্ষবরণ), আগস্ট (শোক দিবস ও ২১ আগস্ট), সেপ্টেম্বর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন) এবং ডিসেম্বরসহ (বিজয় দিবস ও ইংরেজি বর্ষ বিদায়) পূজা-পার্বণের সময় আমাদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর। সুতরাং জঙ্গিবাদ দমনে আমাদেরকে সারা বছর কাজ করতে হবে। যখনই কোনও ক্লু পাওয়া যাবে, তখনই তথ্য নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। আর গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের বিচার দ্রুততম সময়ে করতে হবে, তাহলেও জঙ্গিরা ভয় পাবে- এ পথ পরিহার করবে।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) ও বুধবার (৩ এপ্রিল) বান্দরবানে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়েছে কুকিচিন। তারা সোনালী ব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখায় আক্রমণ চালিয়ে বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র এবং শাখাটির ব্যবস্থাপককে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। প্রথমে জানা গিয়েছিলো, শাখাটি থেকে ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কুকিচিনের সন্ত্রাসীরা। পরদিন সিআইডি জানিয়েছে, কুকিচিনের সন্ত্রাসীরা কোনও কারণে টাকাগুলো নিতে পারে নি; তবে অস্ত্র ও ব্যাংক ব্যবস্থাপককে নিয়ে গেছে।

বুধবার (৩ এপ্রিল) সোনালী এবং কৃষি ব্যাংকের বান্দরবানের থানচি শাখায় আক্রমণ চালিয়ে কুকিচিন প্রায় ১৭ লাখ টাকা এবং বেশকিছু মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। এ দুই ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, কুকিচিন এ ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ডাকাতদের ধরতে পুলিশ ও বিজিবি অভিযান পরিচালনা করছে। প্রয়োজনে এই অভিযানে সেনাবাহিনীও অংশ নেবে। আবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ-আল মামুনও বলেছেন, ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড়া হবে না।

এখন আমাদের সবচেয়ে বড় বিষয় সোনালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা, অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। আমাদের মনে রাখতে হবে- পাহাড়ে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের এই কুকিচিনই প্রশিক্ষণ দিয়েছিলো। এখনও যে তারা প্রশিক্ষণ দেয় না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। কারণ কুকিচিনও জঙ্গিদের মতোই সন্ত্রাসী সংগঠন। তাই প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে অভিযান জোরদার করা হোক, এক্ষেত্রে হেলিকপ্টারের বেশি ব্যবহার করা যায়, অন্যথায় জঙ্গিরা মাইন পুতে রাখে। মোটকথা, পাহাড়ে জঙ্গি নির্মূলে এখনই আমাদেরকে কঠোর যৌথ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এখানে র‌্যাবকেও সম্পৃক্ত করা যায়।

আমি প্রথমে বলেছি যে, মাত্র দেড় সপ্তাহ পরই আমাদের প্রাণের উৎসব বাংলা বর্ষবরণ (পহেলা বৈশাখ) এবং চৈত্র সংক্রান্তি। আর পাহাড়ে এই দুইটি দিবসকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি উৎসবমুখর অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। আর জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভুলে উদ্‌যাপন করতে যাওয়া বাঙালির প্রাণের উৎসবের ঠিক আগেই বান্দরবানে তিনটি ঘটনা ঘটলো। সুতরাং আমাদেরকে কুকিচিনকে নির্মূল করতে কাজ করতে হবে এবং দেশজুড়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করতে হবে। এসবক্ষেত্রে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি র‌্যাবকে অনেক বেশি কাজে লাগাতে হবে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সুযোগটি নিয়েছিলো নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীর এবং ছাত্রশিবির। যা এখন প্রকাশিত হচ্ছে। বর্তমানে আদালতের নির্দেশনার ফলে বুয়েটে আবারও ছাত্ররাজনীতি চালু হওয়ায় জঙ্গিবাদ এখানে থাকবে না বলাই যায়, তবে বুয়েটের কোনও শিক্ষার্থী এখনও যদি জঙ্গিবাদে জড়িত থাকে, তবে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। কারণ গণমাধ্যমে হিযবুত তাহ্‌রীর ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে কথা বলায় নাকি বুয়েট শিক্ষার্থীদেরই হুমকি দিচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিরই কিছু ছাত্র। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য বরাবর বুধবার (৩ এপ্রিল) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। এ অবস্থায় জঙ্গিবাদ দেশের কোনও কোণায়ই থাকতে পারবে না। কারণ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে।

এ অবস্থায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কাজ করা ছাত্র-শিক্ষক এবং প্রগতিশীলদের পৃষ্ঠপোষকতা করুন, কারণ তাঁরাই আপনাদের বাহুবল হবে।

আর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করুন, এখনই।

লেখক : কালাম আঝাদ, সম্পাদক ও প্রকাশক, বাঙলার কাগজ