নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে লাগবে ৫ শ কোটি টাকা

নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে লাগবে ৫ শ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে পরিশোধিত মূলধনের অঙ্ক বাড়িয়ে ৫ শ কোটি টাকা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক-কোম্পানি আইনে দেওয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সীমা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

আগের নিয়মে প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন ছিলো ৪ শ কোটি টাকা। তবে গত ৩ বছরে যেসব ব্যাংককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিলো, বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁদের মূলধন ৫ শ কোটি টাকায় উত্তীর্ণ করার শর্ত বেঁধে দিয়েছিলো।

আগের প্রায় সব ব্যাংক মূলধন ৫ শ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘ব্যাংক-কোম্পানি আইনের ১৩ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে শাখাভিত্তিক কার্যরত ব্যাংক-কোম্পানিসহ যে কোনও নতুন ব্যাংক-কোম্পানি স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৫ শ কোটি টাকা নির্ধারণ করলো।’

‘এ ছাড়া শাখাবিহীন ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ১২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করলো।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গত বুধবার (১৪ জুন) ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের নীতিমালা অনুমোদন করে। বৃহস্পতিবার সেই নীতিমালা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক সময়ে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ৫০ লাখ টাকা। ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ হওয়ার পর পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।

২০০৩ সালের মার্চে তা আরও বাড়িয়ে ১ শ কোটি টাকা, ২০০৭ সালে তা ২ শ কোটি টাকা, ২০১১ সালে তা দ্বিগুণ করে ৪ শ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।

বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স নিতে পরিশোধিত মূলধন আরও ১ শ কোটি টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসে।

স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাংক খোলার অনুমতি দেওয়া হয়ে ১৯৮৩ সালে। এরপর ১৯৯৫ ও ২০০১ সালে বেসরকারি খাতে আরও কিছু ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। ২০১২ সালে লাইসেন্স পায় ৯টি ব্যাংক।

এসব ব্যাংকের সবগুলো ব্যবসায়িক দিক দিয়ে পুরোপুরি দাঁড়াতে পারে নি। সবমিলিয়ে ২০০৮ থেকে তিন দফায় ১৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়।

সবশেষ ২০২১ সালে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লাইসেন্স পাওয়ায় দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা এখন ৬১টি।

অর্থনীতিবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, অর্থনৈতিক পরিসরের তুলনায় বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি।

ব্যাংকিং খাতে প্রধান সমস্যা এখন খেলাপি ঋণ। সরকারি ব্যাংক ও খেলাপি ঋণ এক সময় একসূত্রে গাঁথা ছিলো। এই প্রবণতা এখন ছড়িয়ে পড়েছে বেসরকারি ব্যাংকেও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত মার্চ শেষে দেশে ব্যাংক খাতে ঋণ ছিলো ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয় ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশই এখন খেলাপি।

এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫৭ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৬৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা।

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিলো ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব দেয়, তার তুলনায় প্রকৃত খেলাপি ঋণ অনেক বেশি বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ। তাঁদের হিসাবে খেলাপি ঋণ হবে ৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি।

আইএমএফ পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখানোর পক্ষে।