স্বাধীনতার মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথ : পিটার ডি. হাস

স্বাধীনতার মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথ : পিটার ডি. হাস

কলাম :: বহু বছর ধরে বিতর্ক চলমান; সমৃদ্ধি কি অধিকতর স্বাধীনতা উৎসাহিত করে? নাকি এর উল্টোটা (স্বাধীনতা সমৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে?)। স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির মধ্যে সংযোগ নিয়ে আটলান্টিক কাউন্সিলের যুগান্তকারী গবেষণা পরের বিষয়টিকে সমর্থন করে। স্বাধীনতা শুধু সমৃদ্ধির উপজাত নয়; স্বাধীনতা হলো সমৃদ্ধিকে চালনার ইঞ্জিন।

বাংলাদেশের ওপর তাঁদের প্রতিবেদনে কিছু গভীর অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে, যা আজ প্রকাশিত হচ্ছে। আটলান্টিক কাউন্সিলের স্বাধীনতা সূচক দিয়ে শুরু করছি, যেখানে ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম এবং এ দেশকে ‌‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বঞ্চিত’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। আরও বেশি কষ্টদায়ক যে, ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের এ সূচকে ২৫ ধাপ অবনতি হয়েছে। আটলান্টিক কাউন্সিলের সূচক অন্যান্য সূচক থেকে আলাদা। এটি শুধু নির্বাচন বিষয়ক নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং আইনি স্বাধীনতা পরিমাপ করে। মূলত অর্থনৈতিক এবং আইনি স্বাধীনতার তুলনায় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক পেছনে।

বাংলাদেশ সমৃদ্ধি সূচকে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে, ১৬৪ দেশের মধ্যে ৯৯তম যা এ দেশকে ‌‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসমৃদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে রেখেছে। এখানে সূচকটি মাথাপিছু জিডিপি’র চেয়ে বেশি কিছু, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য, বৈষম্য, পরিবেশ, সংখ্যালঘু অধিকার ও শিক্ষা।

নিশ্চিতভাবে এই চিত্র স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন অর্জনকে আড়াল করে। আর একটি ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসমৃদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে থাকা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে ২০২৬ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ এবং একইসঙ্গে সরকারের রূপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে উত্তরণের পথে বিরাট বাধাকে তুলে ধরে।

আটলান্টিক কাউন্সিলের বিবেচনাধীন ১৬৪ দেশের মধ্যে একইসঙ্গে ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বঞ্চিত’ এবং ‘সমৃদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে কোনও দেশ নেই। এর মানে সমৃদ্ধ হতে বাংলাদেশকে অবশ্যই এর জনগণের জন্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং আইনি স্বাধীনতা সম্প্রসারণে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। সব সমাধানের উপায় এক নয়। প্রত্যেক দেশকে স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধির পথে স্বতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বন্ধু এবং উন্নয়ন সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র এই ক্ষেত্রে নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে। প্রত্যেক দেশ দুর্নীতির মতো বিষয়ে এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষিত রাখার লড়াই করছে। কিন্ত মূল বিষয় হলো : সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়া নয়, সক্রিয়ভাবে স্বীকার এবং মোকাবিলা করা।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধি উভয়ক্ষেত্রেই সহায়তা করতে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বাংলাদেশকে ‘রূপকল্প-২০৪১’ লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করার উপায় অন্বেষণ অব্যাহত রাখবো। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সম্প্রসারিত স্বাধীনতার মাধ্যমে পরিপূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ পরবর্তী এশিয়ান টাইগার হতে পারে- অবশ্যই রয়েল বেঙ্গল টাইগার!

লেখক : পিটার ডি. হাস, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত