মুজিববর্ষে প্রথম দফায় পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলাসহ ৫২ উপজেলা হচ্ছে ভূমিহীন ও গৃহহীন।

মুজিববর্ষে প্রথম দফায় পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলাসহ ৫২ উপজেলা হচ্ছে ভূমিহীন ও গৃহহীন।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে অর্থাৎ মুজিব শতবর্ষে দেশজুড়ে ১ জন লোকও ভূমিহীন ও গৃহহীন না রাখার প্রত্যয় নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে দেশজুড়ে কাজ চলছে। ফলে বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা যে ২৬ হাজার ২২৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ২ শতাংশ জমির দলিলসহ ঘর বিতরণ করবেন, তাতে পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলা সম্পূর্ণরূপে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে এদিন দেশের ৫২ উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী।

জানা গেছে, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারদেরকে আধুনিক আবাস ও জমি দিয়ে পুনর্বাসন করায় বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় ও মাগুরাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের গৃহীত অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে পঞ্চগড় ও মাগুরার ৮টি উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলার মোট ৫২টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর বিতরণ করবেন।’

‘৫২টি উপজেলায় মোট ১৯ হাজার ৭৮০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুরো পঞ্চগড় ও মাগুরায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা শূন্য। এটি একটি বিশাল অর্জন।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, ‘২ জেলাসহ ৫২টি উপজেলায় কাউকে ভূমিহীন ও গৃহহীন হিসেবে পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে জমিসহ বাড়ি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

মুখ্য সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি প্রকল্প আশ্রয়ণ-২-এর তৃতীয় ধাপে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে প্রায় ৬৭ হাজার ৮ শটি ঘর দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে। ২১ জুলাই ২৬ হাজার ২২৯টি বাড়ি হস্তান্তর করা হবে এবং বাকি ৮ হাজার ৬৬৭টি ঘর নির্মাণের কাজ এখনও চলছে।’

এর আগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ও ২০ জুন প্রথম দুই ধাপে দেশে গৃহহীনদের মধ্যে ২ শতাংশ জমিসহ ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি আধাপাকা বাড়ি বিতরণ করা হয়েছিলো।

ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে যে ৫২ উপজেলা : ঢাকার নবাবগঞ্জ, মাদারীপুর সদর, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, মানিকগঞ্জের ঘিওর ও সাটুরিয়া, রাজবাড়ীর কালুখালী, ফরিদপুরের নগরকান্দা, নেত্রকোণার মদন, ময়মনসিংহের ভালুকা, নান্দাইল, ফুলপুর ও ফুলবাড়িয়া; জামালপুরের বকশীগঞ্জ, চট্টগ্রামের পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও রামগঞ্জ, ফেনীর ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম; গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ, তেতুলিয়া ও বোদা; দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, নীলফামারীর ডিমলা, নওগাঁর রাণীনগর, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, রাজশাহীর মোহনপুর, চারঘাট ও বাঘা, বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও দুপচাঁচিয়া, নাটোরের বাগাতিপাড়া, পাবনার ঈশ্বরদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, ঝিনাইদহে হরিণাকুণ্ডু, সাতক্ষীরার তালা, মাগুরার মাগুরা সদর, শ্রীপুর, মোহাম্মদপুর ও শালিখা এবং ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া ও পটুয়াখালীর দশমিনা।

২০২১-২২ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রায় ৪ হাজার ২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিলো।

সরকার সারাদেশে গৃহহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রায় ৫ হাজার ৫১২ একর খাস জমি উদ্ধার করেছে এবং এই জমির আনুমানিক বাজার মূল্য ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা।

এ ছাড়া আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় বাড়ি নির্মাণের জন্য সরকার ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯১ দশমিক ৭৯ একর জমি কিনেছে। আর এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৪৬২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে এসব জমিতে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

ড. কায়কাউস বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট সত্ত্বেও সরকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে। কারণ সঙ্কটের মধ্যেও গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে আবাসন প্রকল্প অবদান রাখছে।’ 

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক জনশুমারি অনুযায়ী, সারাদেশে ভাসমান লোকের সংখ্যা মাত্র ২২ হাজার।